নিউজ ডেস্ক: দেশে রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন নেই। বিএনপির সরকার পতনের হুমকি-ধামকি চার দেয়ালে আটকা পড়েছে বহু আগেই। বিধ্বংসী জামায়াত-শিবির এখন লেজ গুটিয়ে গর্তে। সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচিও অনেকটা লোক দেখানো। চাপা উত্তেজনা থাকলেও রাজনীতিতে সুনশান নীরবতা। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কর্মসূচিও আর হালে পানি পাচ্ছে না। এমন স্থিতিশীলতার মধ্যেও নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রাজধানী ঢাকা।
রাজধানীজুড়ে পুলিশের ৩০০’র মতো তল্লাশি চৌকি। পুলিশ-র্যাব সাইরেন বাজিয়ে টহল দিচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে। মার্কেটগুলোর সামনে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। বিমানবন্দর চত্বরে সাধারণের চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে। পাহারা বসেছে মসজিদ-মন্দিরেও। গরিব-দুস্থ-অসহায় মানুষ রাজধানীর মাজারগুলোতেও রাতে অবস্থান করতে পারছে না। ডিস্কো বন্ধ, নজরদারি বেড়েছে পানশালাগুলোর ওপরও। যেন এক অন্যরকমন রাজধানী। গুলশান আর শোলাকিয়ার ঘটনা পাল্টে দিয়েছে রাজধানীর নিরাপত্তার চেহারা। প্রত্যেকেই সতর্ক। সবাই যেন সবার গতিবিধি লক্ষ করছে।
তবে এমন নিরাপত্তার মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমছে না। বরং অধিক নিরাপত্তার কারণেই অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। পুলিশের অধিক তল্লাশি আবার হয়রানিতেও রূপ নিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছে। উত্তরা থেকে মোটরসাইকেলে মতিঝিলে এসে একটি বেসরকারি ব্যাংকে অফিস করেন মফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরাও সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু রাস্তায় যেভাবে তল্লাশি হয়, তা অনেকটাই হয়রানির পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। হয়রানি রোধে তল্লাশিতে বিশেষ কৌশল আনা উচিত বলে জানান তিনি।
একই কথা জানালেন সিএনজি অটোরিকশাচালক নাজমুল। তিনি বলেন, রাতে আর আগের মতো যাত্রী পাওয়া যায় না। যারা গাড়িতে ওঠেন তারাও ভয়ে থাকেন।
নিরাপত্তার প্রশ্নে কথা হয় হযরত শাহআলী (র.) মাজারে জলসার জন্য সাউন্ড সরবরাহকারী বাবুলের সঙ্গে।
তিনি বলেন, মাজারে গান-বাজনা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক শিল্পী যারা মাজারে গান গেয়ে সংসার চালান, তাদের মাথায় হাত। গুলশান ঘটনার পর থেকে রাতে মাজার চত্বরে দুস্থ মানুষদেরও আর থাকতে দেয়া হয় না। নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখে মনে হচ্ছে, কখন যেন কি ঘটে যায়!
কথা হয় দেশের সর্ববৃহৎ শপিংমল বসুন্ধরা সিটির এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে আমরা স্বস্তিতে থাকলেও ক্রেতারা যে উদ্বিগ্ন তা বেচাকেনা থেকেই প্রমাণিত। গুলশান ঘটনার পর থেকেই বেচাকেনায় ধস নেমেছে এবং তা ঈদের আগেই। সকলের মধ্যেই এক প্রকার আতঙ্ক কাজ করছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী এখন বাজারে যেতেও ভয় পাচ্ছে। গুলশান মার্কেটের অনেকেই তাদের ব্যবসার মন্দার কথা বলছেন। বিদেশিদের কেউ মার্কেটে আসছেন না। হোটেল সোনারগাঁওয়ে গেলাম। পুরো হোটেল খাঁ খাঁ করছে। গোটা লবি ফাঁকা। এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি। হোটেল কর্তৃপক্ষ বললো, বিদেশিরা চলে গেছেন। যারা আসার কথা ছিল, তারা বুকিং বাতিল করেছেন। এই চিত্র তো কারো জন্যই মঙ্গল নয়। তার মানে নিরাপত্তা বাড়লে জনমনে নানা প্রশ্নও দেখা দেয়।
সূত্র: জাগো নিউজ
Be the first to comment on "অধিক নিরাপত্তায় উদ্বেগও বাড়াচ্ছে"