নিউজ ডেস্ক : নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এমপিদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর তিন মাস বাকি আছে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলার সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের জরুরী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে সজাগ ও সতর্ক থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ বিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এসব কমিটিগুলোকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। সর্বত্র এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মধ্যে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে যেন শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে, মানুষ যেন নিরাপদে থাকে- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংসদ সদস্যদেরও পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজ নিজ এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনে দলীয় সংসদ সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা আরও বলেন, দেশের দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। এগুলোকে সত্যিকার অর্থেই কার্যকর করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি এদের কারা মদদ দিচ্ছে, বিপথে চালিত করছে, অর্থ-অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে সেসব মূল হোতাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উৎস খুঁজে বের করে একে পুরোপুরি দমন করতে চায়। এজন্য অন্য সবার মতো সংসদ সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।
বৈঠকসূত্র আরও জানিয়েছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্যও দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে অভিন্ন খুতবা দেওয়া হয়েছে, সেটি সব মসজিদে সঠিকভাবে পাঠ করা হচ্ছে কী না- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ‘বর্তমানে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ চলছে, সেটি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়’- শোলাকিয়ার খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নেতৃত্বে দেশের এক লাখ আলেমের যৌথ বিবৃতিও দেশজুড়ে প্রচার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্যদেরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেউ আর যাতে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদে যুক্ত না হয়, বিপথে না যায়- অভিভাবক ও শিক্ষকদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংসদ সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা পালনেরও নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, সরকারের যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে, আরোও কি কি উন্নয়ন কাজ করা হবে- সেগুলো বার বার জনগণের মাঝে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের তিন মাস আগেই দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে। সেজন্য এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ সময় এমপিদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং সৃষ্টি না করার নির্দেশ দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার তাগিদ দেন। এছাড়া সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী হবে, এবছরই হবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা তৈরি না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, নারী এমপিরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। মহিলা আসনে যেসব এমপি আছেন, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা তৈরি করার দরকার নেই। তাদেরকে আমি মনোনয়ন দেবো না। আপনাদেরকে যেজন্য এমপি বানিয়েছি সেই সংগঠন গোছানোর কাজ করুন। নিজে নিজে এমপি প্রার্থী হওয়া যাবে না, মনোনয়ন দেবো আমি। কে মনোনয়ন পাবে সেটা আমি দেখবো। আপনারা সংগঠণের জন্য কাজ করুন। নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা তৈরি করতে গিয়ে আমাদের আসনগুলো নষ্ট করলে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।
দলীয় সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি নারী সংগঠনগুলোকে চাঙ্গা করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাই সারাদেশে এদের প্রতিরোধে নারী সংগঠনকে শক্তিশালী করে নারী সমাজের মাঝেও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে হবে।
বৈঠকে সরকার দলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যও বক্তব্য দেন। বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. হাছান মাহমুদ, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, বিএইচ হারুণ প্রমূখ। সূত্র : দৈনিক জনকণ্ঠ
Be the first to comment on "এমপিদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ"