শিরোনাম

নড়াইলের হাজার বছরের মৃত শিল্প মৃতপ্রায়

নড়াইলের হাজার বছরের মৃত শিল্প মৃতপ্রায়

নিউজ ডেস্ক : নড়াইলের রতডাংগা গ্রামের কুমাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাটির হরেক রকম জিনিস তৈরির কাজে। আর পুরুষের পাশাপাশি এ কাজ করছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। কাজ চলছে ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত। আধুনিকতার মধ্যে এখন এ কাজে তেমন লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার দীর্ঘ দিনের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন তারা। এ গ্রামে মৃৎ শিল্পের ইতিহাস হাজার বছরের। জানা যায় এক সময় এখানকার কুমারদের সুনিপুণ হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তি জেলাগুলোর হাটবাজারেও বিক্রি হতো এখানকার তৈরি জিনিসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিলের চাহিদা দিনকে দিন কমতে থাকে। আর এ জায়গা দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইন সামগ্রী। এক সময়ের রান্নাঘরের হাড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টব, কলস, পিঠার ছাচ, মুড়ি ভাজার সামগ্রী তৈরি করে গৃহস্থলির চাহিদা মেটানো সেই সব কুমারদের অধিকাংশেরই চাকা (মাটির সামগ্রী তৈরি করা যন্ত্র) বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রামে তা সচল রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের প্রায় শ’খানেক পরিবারের মধ্যে ৪৬টি কুমার পরিবার। এসব পরিবারের শতাধিক সদস্য এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিজ হাতে তৈরি করে বাজারে বিক্রয় করে সংসার চালায়। তবে প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে এসব মাটির তৈরি জিনিসপত্রের। তাই বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে। কেউবা বিদেশ, বা,কামারের কাজ করছে, । এ গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে দিনরাত ঘুরছে কুমারের চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা নরম করছে, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শোকানোর কাজ করছে, কেউ মাটির হাড়িগুলো পোড়ানোর কাজ করছে। আবার আনেকের মনোযোগ পোড়ানো জিনিসপত্রে রং-তুলির কাজে। রতডাংগা গ্রামের কুমার সুমন পাল জানান, চৈত্র-বৈশাখ এ দু’মাসে রোদেও তেজ বেশি থাকায় তাদের কাজও বেশি হয়। আরেক কুমার মিন্টু পাল বলেন, এখন কাজের চাপ খুব কম। তাই বেকার না থেকে পাশাপাশি অন্য কাজ করার চিন্তা করছি। মন্টু পাল করে বলেন, এ পেশায় এখন আর লাভ নেই। অন্য কোন কাজ জানিনা। তাই বাপ দাদার পেশাকে কোন রকমের আঁকড়ে ধরে আছি। তবে সরকার যদি আমাদের মাটির কাজকে একটু প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক ভাবে সাহায্য করে প্লাস্টিকের পন্যকে কমিয়ে বাজারে স্থান দিতো তাহলে এই মাটির শিল্পটি বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখা যেতো। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে বেঁেচ আছি । কোন জনপ্রতিনিধি ও আমাদের কোন খোজ খবর রাখে না। হাজার বছরের মৃত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "নড়াইলের হাজার বছরের মৃত শিল্প মৃতপ্রায়"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*