নিউজ ডেস্ক: গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছিল বিভিন্ন দেশ তার প্রশংসা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ওই হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় রাজারবাগের টেলিকম মিলনায়তনে এক সভায় একথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এ ঘটনার পর জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমার কাছে এসেছিলেন, তিনিও প্রশংসা করে গিয়েছেন। আমার কাছে সমস্ত রাষ্ট্রদূতরা এসেছিলেন-সেই দিনের ঘটনায় সবাই পুলিশের প্রশংসা করে গিয়েছে।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়ার একটি প্রস্তাবে সহমত জানিয়েছেন মন্ত্রী।
“অবশ্যই যে চারজন শাহাদত বরণ করলেন তাদের অবশ্যই, আমি মনে করি জাতীয় সম্মান দেখানো উচিত।”
গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারীরা ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হামলাকারীদের বোমা-গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও গুলশান থানার ওসি সালাহউদ্দীন ভূঁইয়া। আহত হন আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
ওই ঘটনার পর পিছু হটে পুলিশ; সারারাত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা ক্যাফেটি ঘিরে রাখার পর সকালে সেখানে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। এরপর সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।
এদিকে ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, মুক্তিযুদ্বের সময় জনগণ যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকত এখন তেমনই জনগণ পুলিশের পাশে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসছে।
পুলিশের সফলতাগুলো গণমাধ্যমে যাতে প্রচার হয় সেজন্য উদ্যোগ নিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
“আপনার মিডিয়ায় পুলিশের সফলতাগুলো তুলে ধরুন। শুধু পুলিশ না, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরও যারা আছেন তাদের সবার সফলতা আপনি বলবেন। তাহলে পুলিশ উৎসাহিত হবে, সমাজ উৎসাহিত হবে, সবাই উৎসাহিত হবে।”
পুলিশের এক অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। (ফাইল ছবি)
পুলিশের এক অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। (ফাইল ছবি)
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, “সব সময় বলে আসছি, আমরা একটা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। এই ষড়যন্ত্র আমাদের দেশে থেকে হচ্ছে, বিদেশ থেকেও ইঙ্গিত আসছে, সহযোগিতা আসছে। সেগুলো কিন্তু আজকে চিহ্নিত করতে পেরেছি।”
গুলশান হামলার ভয়াবহত তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা জঙ্গিদের তৎপরতা দেখেছি, তাদের হিংস্রতা দেখেছি, তাদের ভয়াবহতাও দেখেছি। আমরা অগ্নিসন্ত্রাস দেখেছি, টার্গেট কিলিং দেখেছি। আমরা সেই ১ তারিখে যে বর্বরতাটা দেখলাম, যে নৃশংসতাটা দেখলাম এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আর ঘটেনি।
“কী নৃশংসভাবে হত্যার পরও তাদের মাথা থেকে দেহ আলাদা করা হয়েছিল। এখানে কেউ বাদ যায়নি। পুরুষ, নারী কেউ বাদ যায়নি। সেই দৃশ্যও আমরা দেখলাম। আমরা দেখলাম শোলাকিয়ার মাঠে একটা তাণ্ডব তৈরির প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল সেটাও দেখলাম।
“সবাই এরা বাংলাদেশের মানুষ। এগুলো সব একই সূত্রে গাঁথা। কখনও হুজি, কখনও জেএমবি, কখনও আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, কখনও আনসার আল ইসলাম, কখনও হিযবুত তাহরীর হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে।”
জঙ্গিরা সব একই ‘সুতোয় গাঁথা’ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সেই একাত্তরের সময়ে আপনাদের চেহারা দেখেছি। এরপর একে একে আপনাদের চেহারা দেখে চিহ্নিত হয়েছেন। আমাদের পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা আপনাদের সবাইকে চিহ্নিত করে ফেলেছে।
“জনরোষ থেকে বাঁচতে চাইলে তওবা করে ভালো রাস্তায় হাটেন। আপনারা চিহ্নিত হয়েছেন, অচিরেই আপনারা সবই দেখতে পারবেন।”
‘প্রতিনিয়ত হুমকি’
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, প্রতিনিয়ত ঢাকায় হামলার হুমকি পাচ্ছেন তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আজকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিনিয়ত মেসেজ পাচ্ছি যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলা হবে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলা হবে।”
তবে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর পুলিশ সদস্যরা ‘কঠিন’ সময় পার করছেন বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে বলি, জিম করে ওজন কমাতে পারি নাই, ডায়েট করে ওজন কমাতে পারি নাই; এই ঘটনায় চার কেজি ওজন কমেছে। আমার আইজি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত ‘উই আর ফেসিং দ্য সেইম সিচুয়েশন’।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
Be the first to comment on "পুলিশের ভূমিকার প্রশংসায় বিদেশিরা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী"