শিরোনাম

অভিভাবকের ভুলে ‘মুগ্ধ’ আজ অপরাধী!

নিউজ ডেস্ক : পাঁচ লাখ টাকার মোটরসাইকেল থাকার পরও নতুন মডেলের আরও দামি মোটরসাইকেল চাই। বাবা দিতে রাজি না হওয়ায় মাত্র এসএসসি পাস করা মুগ্ধ আগুন জ্বালিয়ে দেয় বাবা-মায়ের ঘরে! সেই আগুনে দগ্ধ বাবা এটিএম রফিকুল হুদা (৪৮)আজ বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সন্তানের দেওয়া আগুনে তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
শিশু মনো বিশ্লেষকরা এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে রাজি নন। তারা বলছেন, এসএসসি পাস করা কিশোরের কাছে পাঁচ লাখ টাকার মোটরসাইকেলই বা থাকবে কেন? সন্তানের চাহিদা ও বিলাসি জিনিসপত্র ব্যবহারের বিষয়ে অভিভাবকেরা সতর্ক না হলে, এ ধরনের মানসিক বৈকল্য দেখা দিতেই পারে। অভিভাবকরা সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে কিছু ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছেন, ফলে এ ধরনের ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে।
কিশোর মুগ্ধ যখন আবদারের জিনিস না পেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল, তার আভাস পাওয়া যায় ঈদের দিন রাতে (১৩ সেপ্টেম্বর) দেওয়া তার ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে। সে লিখেছে, ‘পৃথিবীতে নিজে ভালো থাকতে হলে স্বার্থপর হতে হবে। আর অন্যকে ভালো রাখতে গেলে নিঃস্বার্থ হতে হবে এটাই সত্য।’
মাত্র ১৬ বছরের কোনও ছেলের এ ধরনের চিন্তা আসবে কেন-এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা উচিত। আমাদের সমাজের যে অস্থিরতা সেগুলো তার ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে সে কোনটা করবে বা করবে না সেটা অভিভাবককে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে সেটাও করতে হবে তাকে বুঝিয়ে। এই অভিভাবকসুলভ আচরণে ভুলভ্রান্তি থাকলে সন্তান সেটা গ্রহণে অস্বীকার করে এবং সহিংস হয়ে ওঠে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন মডেলের মোটরসাইকেল না পেয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে ফরিদপুর শহরে নিজের মা-বাবার শরীরে আগুন দেয় তাদের কিশোর ছেলে মুগ্ধ। এতে রফিকুল হুদা গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। তার স্ত্রী সিলভিয়া হুদা ও মুগ্ধ সামান্য দগ্ধ হন। পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে রফিকুলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত শুক্রবার তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। আজ বুধবার রফিকুল হুদা মারা যান। সিলভিয়া হুদা ও মুগ্ধকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত থানায় এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

শিশুদের বেড়ে ওঠার পদ্ধতির বিষয়ে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সন্তান-পরিবার-সমাজ এই তিনটির পারস্পরিক অসামঞ্জস্যতা ক্রমশ বাড়ছে। বাবা-মায়ের প্যারেন্টিং-এর অভাব লক্ষণীয়। মনে রাখা জরুরি বিত্ত আর চাহিদা পূরণ, আর দামী স্কুল দিলেই সন্তানের মঙ্গল হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবা মায়েদের উদ্দেশ্য খুবই আন্তরিক। কিন্তু অজ্ঞানতার কারণে পদ্ধতি ভুল হয়ে যায়। করণীয় বিষয়ে বলতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এটি দীর্ঘমেয়াদী একটা প্রক্রিয়া। যেখানে বাবা-মা ও সন্তানদের নিয়ে বসা এবং কথা বলা জরুরি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুর বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক বিকাশ হলে এরকম হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ কাজ সে এই প্রথম হঠাৎ করেছে এমন না। এই বড় দুর্ঘটনা ঘটানোর আগে সে যখন ছোট ছোট অপরাধপ্রবণ কাজগুলো করেছে, তখনই তাকে থামানো অভিভাবকের কর্তব্য ছিল। শুধু থামালেই হবে না তাকে পথ দেখিয়ে দিতে হবে।’

এই অধ্যাপক আরও বলেন,‘এই যে পরিবারে বন্ধন দুর্বল হয়ে আসা, চারদিকে অস্থিরতা, জোর করে যা চাচ্ছে তা আদায় করে নেওয়া, সেটা শিশুপালনের ‘ফলস লার্নিং’ এর কারণে ঘটছে।’ করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুস্থ চাইল্ড ডেভেলপমেন্টের নীতি থাকতে হবে এবং এটা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণার মধ্য দিয়ে এটা তৈরি করতে হবে।’

মুগ্ধের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুগ্ধ এ বছর ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এরপর থেকেই সে তার বাবার কাছে নতুন মডেলের একটি মোটরসাইকেল দাবি করে। বর্তমানে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের আর ১৫ মডেলের, যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

basic-bank

Be the first to comment on "অভিভাবকের ভুলে ‘মুগ্ধ’ আজ অপরাধী!"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*