নিউজ ডেস্ক : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত পুণ:খননকৃত মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-রুট উন্মুক্ত এবং খাদ্য নিরাপত্তায় নির্মিত বৃহত্তম খাদ্য গুদাম ‘মংলা সাইলো’র উদ্বোধন করা মাত্রই হর্ষধ্বনি ও স্বত:স্ফুর্ত করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠল গোটা বাগেরহাট।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাগেরহাটে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ দুই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। একইসাথে তিনি নিয়মিত ড্রেজিংয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র জন্য কেনা ১১টি ড্রেজারেরও উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চিন্তাভাবনাই ছিল দেশে খাদ্য ঘাটতি রাখা। কারণ, খাদ্য ঘাটতি থাকলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায়, লুটেপুটে খাওয়া যায়। আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ভিক্ষা করবে, আর আমি ভিক্ষুকের সরদার হয়ে বসে থাকবো, তার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমরা নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহত করণ, দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য সংরক্ষণ ও আপদকালীন খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলার জন্য খাদ্যশস্য মজুদ সক্ষমতা বাড়াতে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা খাদ্য গুদামজাত করার জন্য সাইলো উদ্বোধন করছি। এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই অর্জন আমাদের চিন্তাভাবনার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আমরা শুধু খাদ্য উৎপাদনই করবো না খাদ্যকে সংরক্ষণও করবো যেন আপদকালে আমার তার ব্যবহার করতে পারি এবং এজন্য অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ অন্যের কাছে হাত পাতবে না। আমরা ভাবি, নিজেরা কীভাবে দেশের মানুষকে খাদ্যের নিরাপত্তা দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণকালে সরকারি পর্যায়ে দেশে খাদ্যশস্যের মোট ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। বর্তমানে এ ধারণ ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা ৩০ লক্ষ মে. টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
এ উপলক্ষে বাগেরহাট কালেক্টরেট ভবনের হলরুমে বর্ণাঢ্য ‘শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান’-এর আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন-বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, নৌ সচিব অশোক মাধব রায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়েরর সচিব এ এম বদরুদ্দোজা, বিআইডব্লিউটএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকুসহ শতশত কর্মকর্ত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
মংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-পথটি চালু হওয়ার আগের তুলনায় মোট ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। একই সাথে সুন্দরবনের অভ্যান্তর দিয়ে শ্যালা নদীর নৌ-পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অনাকাঙ্খিত ক্ষতির হুমকী থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ চ্যানেলটি পুনঃখননের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করতে ব্যায়ে হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। বর্তমানে এ চ্যানেল দিয়ে পূর্ণ জোয়ারে ১৫ ফিট গভিরতার নৌযান চলাচল করতে পারছে। এছাড়া, মোংলা বন্দরের জেটি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক স্থাপনাসহ প্রকল্পটি নির্মাণে মোট ব্যায় হয়েছে ৫শ’ ৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়। যার মধ্যে ৩শ’ ৭৭ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ২শ’ কেটি জাপানের জেডিসিএফ অর্থায়ন করেছে।
নৌ-মন্ত্রনালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে ২৬ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ড্রেজার দিয়ে ১৮১ দশমিক ৮০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ড্রেজিংকৃত অংশে পলি ভরাটের কারণে সংরক্ষণ খননের আওতায় সর্বমোট ৬২ দশমিক ১২ লাখ ঘনমিটার পুনঃখনন করা হয়েছে। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র তিনটি ড্রেজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাঁচটি ড্রেজারসহ আটটি ড্রেজার সংরক্ষণ ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নৌ-পথটি চালুর ফলে ৮১ কিলোমিটার দূরত্ব কমেছে। এছাড়া মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের রমজানপুর এলাকায় একটি লুপকাট করায় আরও পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব কমে মোট ৮৬ কিলোমিটার দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে। ২০১৪-২০১৫ সালে প্রায় ১৮টি ড্রেজার ও ১৫টি এক্সাভেটর দিয়ে এ খনন কাজ শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যিনি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাঙালি জাতি নিজে মাথা উঁচু করে চলবে। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেই আওয়ামী লীগ কাজ করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নজির আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন।
এদিকে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মংলা বন্দর থেকে ১৭ কি:মি: ভাটিতে জয়মনির ঘোল নামক স্থানে ৪২ একর জমির ওপর ৫০ হাজার টন খাদ্য শস্য ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সাইলো নির্মান কাজ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এতে মোট ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আধুনিক এই কনক্রিট গ্রেইন এ সাইলোতে যান্ত্রিক উপায়ে খাদ্য খালাসের ব্যবস্থা থাকায় অপচয় এবং খরচ কমবে।
নবনির্মিত সাইলোর ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড: মীর শওকাত আলী বাদশা ও মংলা-রামপালের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, উল্লেখিত প্রকল্প গুলি উদ্বোধনের মদ্যদিয়ে এ অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা ও মংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। যা গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা ছিল। যা এ সরকার পূরণ করছে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর পক্ষে অভিন্দন জানান।
Be the first to comment on "বিএনপির চিন্তাই ছিল দেশে খাদ্য ঘাটতি রাখা: প্রধানমন্ত্রী"