নিউজ ডেস্ক : যত দ্রুত সম্ভব ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুক ব্রিটেন৷ শুক্রবার গণভোটের রায় জানার পর এখন এটাই অবস্থান গোষ্ঠীর বাকি ২৭টি দেশের৷ অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে রায়দানের পর ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় বার গণভোট আয়োজনের দাবি জোরালো হচ্ছে ব্রিটেনে৷ পার্লামেন্টে আলোচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এক লাখ সইয়ের চেয়ে বেশি সই সংগৃহীত হওয়ায় এই আবেদন হাউস অফ কমন্সে আলোচনা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে৷ ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পর অন্যান্য দেশের অসন্তোষের ছোঁয়াচ লাগবে কি না, সেটাই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে বাকি সদস্যদের কাছে৷ বিশেষ করে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও ইতালির অতি-দক্ষিণপন্থীরা ইতিমধ্যেই নিজের দেশে গণভোটের দাবি তোলায়৷
শনিবার ইইউ-এর ছয় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম, লুক্সেমবুর্গ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে একটি জরুরি বৈঠক হয়৷ তার পর জার্মানির বিদেশমন্ত্রী স্টাইনমাইয়ার বলেছেন, তাঁরা চান, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ব্রিটেনের আলাদা হওয়া নিয়ে বোঝাপড়া শুরু হোক৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন জানিয়েছেন, অক্টোবরের পর তিনি আর দায়িত্বে থাকবেন না এবং তাঁর উত্তরসূরিই ব্রিটেনের নতুন ভবিষ্যতের কান্ডারি হবেন৷ কিন্ত্ত ইউরোপীয় কমিশনের মত, অতদিন অপেক্ষার প্রয়োজন নেই৷ সিদ্ধান্ত যখন জানা হয়েই গেছে, তখন অবিলম্বে আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করা হোক৷ জুঙ্কারের কথায়, ব্রিটেনের ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াটা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ বিচ্ছেদ ‘ নয়, কিন্তু তাদের মধ্যে ‘গভীর প্রেমের সম্পর্ক’ও কখনও ছিল না৷
তাই ভবিষ্যতের দিকেই নজর ফেরাতে চান তাঁরা৷ আগামী মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সদস্য দেশগুলির সঙ্গে বৈঠক করবেন ক্যামেরন৷ আর তার পরের দিনই ইউনিয়নের প্রথম ব্রিটেন -হীন বৈঠক৷ প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরনোর প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট জটিল এবং দীর্ঘ হবে, এ বিষয়ে একমত ওয়াকিবহাল এখনো পর্যন্ত প্রয়োগ না হওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির ৫০তম ধারার উল্লেখ করে ব্রিটেন আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের ইউনিয়ন ছাড়ার ইচ্ছের কথা জানাবে৷ তার পর বাকি সদস্য দেশগুলি ব্রিটেনের সেই আর্জি নিয়ে আলোচনা করবে৷ বাণিজ্য, অভিবাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক ঠিক কেমন হবে, তার নানা দিক নিয়ে চলবে দীর্ঘ দর কষাকষি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নজর থাকবে প্রধানত দুটি বিষয়ে৷ ব্রেক্সিট-কে ভান্টেজ পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে ইউনিয়নের ঐক্য আরও জোরদার করা যাবে, নাকি এটাকে একটা দিকনির্দেশ হিসেবে মেনে নিয়ে ইউনিয়নের নিয়মকানুন নেওয়া৷ আর দ্বিতীয়ত, এতদিনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য -সহযোগী ব্রিটেনকে ‘তৃতীয় পক্ষ’ হিসেবে কীভাবে দেখা হবে, তার রূপরেখা তৈরি৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি দেশগুলি ব্রিটেনকে কোনও বিশেষ ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতী নয়৷ তাদের ধারণা, ব্রিটেন যদি ইউনিয়ন ছাড়ার পরেও কোনো বিশেষ সুবিধা পায়, তা হলে অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলিও সেই পথে যেতে চাইবে৷ অন্যদিকে, ব্রিটেনেই ব্রেক্সিট-সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জোরালো দাবি উঠেছে৷
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে পাঠানোর জন্য একটি অনলাইন আবেদনে সই সংগ্রহ করতে শুরু করেছিলেন উইলিয়াম অলিভার হিলি নামে এক ব্যক্তি৷ ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট নিয়ে মতামত দিয়েছেন ভোটাধিকারীদের ৭৫ শতাংশের কম৷ আর পক্ষে বা বিপক্ষে, কোনো দিকেই ষাট শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি৷ এক্ষেত্রে ফের গণভোট আয়োজন করা হোক৷ এই আবেদন পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই একসঙ্গে বহু মানুষ সাইন -ইন করায় সাময়িক ভাবে সাইটটি বন্ধ হয়ে যায়৷ তার পরেও দ্বিতীয় বার গণভোটের সমর্থনে সইয়ের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ পার্লামেন্টের পিটিশন কমিটি শেষ পর্যন্ত ঠিক করবে, এ নিয়ে হাউস অফ কমন্সে আলোচনা হবে কি না৷ কিন্ত্ত কোনও আবেদন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিবেচ্য হতে গেলে অন্তত এক লক্ষ মানুষের দ্বারা সমর্থিত হওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু এখনই পেরিয়ে গেছে।
Be the first to comment on "ব্রিটেনে ফের গণভোটের দাবি জোরদার"