নিউজ ডেস্ক: যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ভারতীয় নতুন পাকিং ‘সুসংহত গেট’ এ বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাক চালকদের উপর ভারতীয় বিএসএফ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অমানবিক নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাক চালকরা। এ নিয়ে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার না হলে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দু-দেশের মধ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।
ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্য বোঝাই ট্রাক নিয়ে পেট্রাপোল পাকিং এ প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ওজন করার সময় ওয়েব্রিজে চালকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ক্যান্টিনে পানি খেতে গেলে গালিগালাজ, ঠিক মতো খাবার না পাওয়া, টয়লেটসহ সব জায়গায় টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে শুনতে হয় গালিগালাজ। সেখানে ট্রাক রেখে কারপাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসতে চাইলে বিএসএফের বাধার মুখে আসতে পারেন না।
অথচ ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপাররা বেনাপোল বন্দরে ট্রাক রেখে দিব্যি রাতে ভারতে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশি ট্রাক চালকদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। রাতে ট্রাক থেকে নিচে নামলে বিএসএফ কর্তৃক মারপিট করে থাকে। এ গরমের দিনে ট্রাকের মধ্যে থাকাও কষ্টের ব্যাপার। নানাভাবে বাংলাদেশি চালকদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে আসা চালক শহিদুল জানান, রফতানি পণ্য নিয়ে ভারতের পেট্রাপোল পাকিং এ যাওয়ার ২ দিন পর গাড়ি খালি হয়েছে। সেখানে খাওয়ার খুব কষ্ট। একটি ক্যান্টিন আছে। ভাত পাওয়া যায় তা তরকারি পাওয়া যায় না। এ দু‘দিনে বিএসএফকে বার বার অনুরোধ করেছি। পণ্য নিয়ে ভারত সীমান্তে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে জেলখানায় ঢুকলাম। আগে যে পাকিং এ যেতাম সেখানে টাকা কম লাগত। বর্তমানে এখানে টাকাও বেশি দিতে হচ্ছে।
যশোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়নের বেনাপোল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ জানান, প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশ কাস্টমস, বিএসএফ আমাদের চালক ও হেলপারদের মারপিট করে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো সুরাহা করছে না। ভারতীয় ট্রাক চালকরা যদি বেনাপোলে ট্রাক রেখে কারপাশের মাধ্যমে ভারতে যেতে পারে তাহলে বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা কেন সেখানে ট্রাক রেখে বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের যে কোন সময় আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস কাগো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ থেকে আগে রফতানি শুরু হতো সকাল ১০টার সময় কিন্ত বর্তমানে নতুন পাকিং চালু হওয়ায় তারা এখন সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার পর রফতানি পণ্য নিয়ে থাকে। বর্তমানে চালকরা নতুন পাকিং এ যাচ্ছে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা কামাল হোসেন বলেন, আশা করেছিলাম ভারতে নতুন পাকিং চালু হলে এতে রফতানি কাজ দ্রুত হবে। কিন্ত সেটা হচ্ছে না। সেখানে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে পাকিং চার্জ বেশি নেয়া হচ্ছে। চালকরা খাওয়া দাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন। তাদের মারপিটও করা হয়ে থাকে। এ অবস্থার সমাধান না হলে এ পথে রফতানি অনেকাংশে কমে যাবে।

Be the first to comment on "ভারতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা"