নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কমিটি। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হাউজ কমিটি অন সাইন্স, স্পেস অ্যান্ড টেকনোলজির চেয়ারম্যান নিউইয়র্কের ফেডারেল কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা শাখাকে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কমিটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
১৪ জুনের মধ্যে এসব তথ্য কংগ্রেস কমিটির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। রিজার্ভ ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, তারা কংগ্রেস কমিটির অনুরোধে পাঠানো চিঠির জবাবের ভিত্তিতে তথ্যগুলো পাঠিয়ে দেবেন।
রিজার্ভ থেকে চুরি করা অর্থ শ্রীলঙ্কা এবং ফিলিপাইনের ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে ফেডারেল ব্যাংকের ব্যাংকের দায়িত্বে অবহেলাকেও দায়ী করা হয়েছে। তবে তাদের দাবী তাদের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি ছিল না।
এর আগেও এ ধরনের তথ্য চেয়ে সিনেটের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির প্রধান টম কার্পেরও নিউইয়র্ক ফেডকে চিঠি দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাক করে ১শ ১ মিলিয়ন ডলার চুরির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বানানের ভুলের কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার চুরি করার চেষ্টা করে অজ্ঞাত হ্যাকাররা।
কিন্তু বানান ভুলের কারণে পুরো অর্থ লোপাট করতে না পারলেও তারা ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়। ওই অর্থ এখনো পুরোপুরি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও এর মধ্যে সামান্য কিছু অর্থ ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইন।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমের ত্রুটির কারণেই হ্যাকাররা রিজার্ভের অর্থ লুট করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থ লেনদেনের জন্য একটি আর্থিক নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে সুইফট। বিশ্বব্যাপী এটি প্রায় ৩ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
এছাড়া এফবিআই এজেন্টদের কাছে প্রমাণ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় কমপক্ষে একজন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। ওই কর্মকর্তা ছাড়াও আরও কয়েকজন জড়িত থাকতে পারেন যারা হ্যাকারদের বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে।
এদিকে, রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাটের পর সুইফটের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু এ বিষয়টি বরাবরই এড়িয়ে গেছে সুফট। নিজেদের নিরাপত্তা প্রটোকল আরো জোরদার করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সুইফট বলছে, চুরির পেছনে সুইফট দায়ী নয় এবং সুইফটকে দায়ী করাই যাবে না। কারণ এটা গ্রাহকদের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ত্রুটি। নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা গ্রাহকদেরই নিশ্চিত করতে হবে।
সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সুইফট বলছে, সুইফটের ব্যবহারকারী হিসেবে সুইফটের সঙ্গে গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক এবং সেই সম্পর্কিত পরিবেশের নিরাপত্তার দায়ভার তার একার নয়।
গ্রাহকদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকলে সে বিষয়ে সুইফটের কিছু করার নেই। আর এক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় সুইফটকে দায়ী করা যাবে না।
কংগ্রেস কমিটি এসব বিষয়েই তদন্ত করছে। দেখা যাক তাদের তদন্ত থেকে রিজার্ভ চুরির আসল তথ্য বেরিয়ে আসে কিনা।
Be the first to comment on "রিজার্ভ চুরির তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কমিটি"