শিরোনাম

লোহাগড়ায় সাংসদের টিআর প্রকল্পের কাজ কাগজে কলমেই !

লোহাগড়ায় সাংসদের টিআর প্রকল্পের কাজ কাগজে কলমেই !

নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির (টিআর) আওতায় মহিলা সাংসদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ২৬ টি প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের মধ্যে ইতনা গ্রামে ১৫ টি, এছাড়া একই ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে দুটি, লঙ্কারচর গ্রামে দুটি এবং রাধানগর গ্রামে একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প ইতনা গ্রামের এস এম মামুনুজ্জামান মামুন এনে কাজ না করে সব গুলো প্রকল্পের অর্থ লোপাট করেছে।
লোহাগড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) সূত্র জানা গেছে, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের (আসন নম্বর-৩২৬) সাংসদ রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআরের ২৬টি প্রকল্পে ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪১ টাকা বরাদ্দ দেয়। এই ২৬ প্রকল্পের মধ্যে ইতনা ইউনিয়নেই ২০ টি প্রকল্প দেওয়া হয়। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এ অর্থ ছাড়করণ করে গত জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জুন মাস শেষ হলেও ওই সব প্রকল্পের দুই / তিনটিতে যৎ সামান্য কাজ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সরে জমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বাকি প্রকল্প গুলোর কাজ না করেই সমুদয় টাকা লোপাট করা হয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,একই জায়গায় বিভিন্ন নামে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প গুলোতে যাদের নাম-পরিচয় দেখানো হয়েছে, তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। এসব জানার পর এলাকার লোকজন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ইতনা গ্রামের রুস্তম মোল্লা, আমির শেখ ও শাহাদৎ মোল্লার বাড়ি পাশাপাশি। রুস্তম মোল্লার বাড়ি হতে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ৫৭ হাজার ২৪১ টাকা, ইতনা পাকা রাস্তা হতে আমির শেখের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করতে ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং ইদ্রিস শেখের বাড়ি হতে শাহাদৎ মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করতে ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ এ তিনটি রাস্তায় প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। ইদ্রিস শেখের ছেলে জুয়েল শেখ বলেন, এখানে বরাদ্দের কথা এই প্রথম শুনলাম। রুস্তম মোল্লা বলেন, কাজ না করে সব টাকা চুরি করেছে।
ইতনা চরপাড়া হিলার বাড়ি হতে রাকিব শেখের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারের জন্য ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। প্রায় দুই শ ফুট লম্বা এই রাস্তাটির পাশেই পাশাপাশি পরপর মোস্তফা, কাবুল ও জলিলের বাড়ি। একই রাস্তায় ওই তিনজনের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন আরো তিনটি প্রকল্পে ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একই রাস্তায় চারটি প্রকল্পের নামে ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, এই রাস্তায় কোনো রকমে এক ঝুড়ি করে মাটি দেওয়া হয়েছে। ৫-৬ জন মাটিকাটা শ্রমিক ৬-৭ দিন এখানে কাজ করেছেন। এতে হয়তো ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এলাকা বাসি বলেন, বর্ষা মৌসুমে এ রাস্থায় পানি কাদার কারনে চলা চলে অসুবিধা হয়। কিন্তু নামকয়াস্তে কাজ করেছে।
দৌলতপুর ধোপাবাড়ির মোড় হতে মধুমতী নদীর ঘাট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে চলতি অর্থ বছরে কাবিটা প্রকল্পে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। প্রায় দুই শ ফুট লম্বা ওই একই রাস্তায় ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে টিআরের চারটি প্রকল্পে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এ রাস্তায় মাটি কোনো রকমে ছড়ায় দেওয়া হয়েছে। এতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। স্থানিয় বাসিন্দা শামিম সরদার বলেন, এ রাস্তায় নতুন করে মাটি ফেলায় কাদা হয়ে চলাচলে আরো ভোগান্তি হয়েছে। নাম মাত্র কাজ করে টাকা লোপাট হয়েছে।
ইতনা গ্রামের ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম চারটি প্রকল্পের সভাপতি। তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে (পিআইসি) শ্রমজীবি মানুষের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁরা এসব প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এ ধরণের প্রকল্পের কাজ মামুনুজ্জামান গত ২০ বছর ধরে এনে সব প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন তিনি।
এ বিষয়ে মামুনুজ্জামান বলেন, এগুলো (প্রকল্পের কাজ) সাধারণত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বররা করেন। আমি তদবির করে ২৬টি প্রকল্পের বরাদ্দ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ কিছু হয়েছে, বাকি প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত করা হবে।
এসব বিষয়ে পিআইও সৈয়দ মোঃ আজিমউদ্দিন বলেন, টিআরের এত প্রকল্প আমার পক্ষে তদারকি করা কঠিন ব্যাপার। যেসব প্রকল্পে কাজ হয়নি, সেগুলো জানতে পারলে কাজ করার ব্যবস্থা করা হবে। ইউএনও মনিরা পারভীন বলেন, এসব প্রকল্পের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহিলা সাংসদ রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি বলেন, এগুলো বরাদ্দ দেই আমি । প্রকল্প কমিটিতে স্বাক্ষর করি। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব ইউএনও ও পিআইওর।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় সাংসদের টিআর প্রকল্পের কাজ কাগজে কলমেই !"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*