নিউজ ডেস্ক: পিটার নেভিল যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। প্রায় ৩০ ওভার ধৈর্য্যের প্রতিমূর্তি হয়ে থাকার পর মনোযোগে হঠাৎ এমন চ্যুতি! লঙ্কানরা ততক্ষণে মেতে উঠেছে বিশ্বজয়ের উল্লাসে। রাজ্যের হতাশা নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। মুহূর্তের ভুলে শেষ অনন্য সাধারণ প্রতিরোধ! তবে ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের অনন্য উদাহরণ হিসেবে টিকে থাকবে এই আখ্যান! থাকবে জীবন্ত রেকর্ডের পাতায়।
পরাজয় থেকে দুই কদম দূরে দাঁড়িয়েও অসাধারণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন নেভিল ও স্টিভেন ও’কিফ। দলকে অসম্ভব এক ড্রয়ের স্বপ্নও দেখাচ্ছিলেন ক্ষনিকের জন্য। সেটা হয়নি। নেভিলের ওই শটে ভেঙেছে জুটি। যে জুটিতে রান এসেছে মাত্র ৪। তারপরও কেন এত বীরত্বগাঁথা?
কারণ, ওই ৪ রান এসেছে ১৭৮ বলে! টেস্ট ইতিহাসের মন্থরতম জুটি। কিন্তু সবচেয়ে সাহসী অধ্যায়গুলোর একটি। ধৈর্য্যের খেলা, সময়ের খেলা। প্রতিরোধের খেলা, ঘুরে দাঁড়ানোর খেলা। মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, চোয়ালবদ্ধ লড়াই। টেস্ট ক্রিকেটের আদি-অকৃত্রিম ব্যাপারগুলিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন নেভিল ও ও’কিফ।
ইনিংসের ৫৭তম ওভারে ২২ গজে একসঙ্গে হয়েছিলেন দুজন। এরপর দুজন রচনা করলেন রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের অপূর্ব মহাকাব্য। বলের পর বল ব্লক হলো, একের পর এক বল ছেড়ে দেওয়া। জুটি ভাঙল ৮৬তম ওভারে। সেটিও কিনা বাজে এক বলে!
লঙ্কানদের হাতে তখন নতুন বল। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলটি ছিল শট, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। এ রকম কত বল না খেলে চরম অনাগ্রহে ছেড়ে দিয়েছেন দুজন! কিন্তু নেভিল কি মনে করে কাট করতে গেলেন। ব্যাটের বাইরের কানায় চুমু দিয়ে বল কিপারের গ্লাভসে। লঙ্কানদের উল্লাস দেখে কে!
১৭৮ বলের জুটিতে স্কোরিং শট ছিল মাত্র একটি। ৬৩তম ওভারে লাকসান সান্দাকানকে সুইপ করে চার মেরেছিলেন ও’কিফ। জুটির রান রেট ০.১৩, কমপক্ষে ১০০ বল খেলা জুটির মধ্যে এটি টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন। আগের সবচেয়ে কম স্কোরিং রেটের জুটি ছিল এবি ডি ভিলিয়ার্স ও হাশিম আমলার। গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে ২৫৩ বলে ২৭ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন ভারতের বিপক্ষে। জুটির রানরেট ছিল ০.৬৪।
এক পর্যায়ে এই জুটিতে রান আসেনি টানা ২৫.৪ ওভার। টেস্ট ইতিহাসে টানা ২৫ ওভার মেডেন খেলার নজির এটিই প্রথম। এর আগে টানা ১০০ বলও রান না করার উদাহরণ নেই একটিও। ১৯৫০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের টানা ৯২ বলে রান না করা ছিল আগের রেকর্ড।
ভাগ্যের ছোঁয়াও অবশ্য পেয়েছে ও’কিফ ও নেভিলের জুটি। ৭৯তম ওভারে ও’কিফের ব্যাটে লেগে বল জমা পড়েছিল শর্ট লেগের হাতে। কিন্তু আউট দেননি আম্পায়ার। শ্রীলঙ্কার ছিল না কোনো রিভিউ!
৮৩তম ওভারে তো সেই ও’কিফকেই আবার ভুল আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু বেঁচে যান তিনি রিভিউ নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত নেভিলের ওই আউটে লড়াইয়ে ক্ষান্তি। ১১৫ বলে নেভিল করেছেন ৯ রান, স্ট্রাইক রেট ৭.৮২। কমপক্ষে একশ বল খেলে তার চেয়ে কম স্ট্রাইক রেটে রান টেস্ট ইতিহাসে আছে আর মাত্র দুটি। ১৯৬৩ সালে ১০০ বলে অপরাজিত ৩ করেছিলেন ইংল্যান্ডের জন মারি (স্ট্রাইক রেট ৩)। ১৯৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০১ বলে ৭ করেছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ মিলার (স্ট্রাইক রেট ৬.৯৩)।
সঙ্গীকে হারিয়ে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ও’কিফ। বোল্ড হয়েছেন এক ওভার পরই। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে বল করতে পারেননি, কিন্তু ব্যাট হাতে ঠিকই করেছেন লড়াই। ১০৫ মিনিট উইকেটে থেকে ৯৮ বলে ৪ রান।
শেষ পর্যন্ত নেভিল-ও’কিফদের হারিয়ে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। তাদের জয়টিও তো রচনা করেছে ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ এক অধ্যায়। টেস্টের প্রথম দিনই ১১৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল শেষ পর্যন্ত কিনা জিতল ১০৬ রানে!
পাল্লেকেলে টেস্ট তাই শেষ পর্যন্ত গাইল টেস্ট ক্রিকেটেরই জয়গান!
Be the first to comment on "১৭৮ বলে ৪ রান!"