শিরোনাম

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির ঘুষ অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্যে এএসআই আশীষ

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির ঘুষ অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্যে এএসআই আশীষ

নিউজ ডেস্ক ॥ পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মঈনূল হক’র বিরুদ্ধে বদলী, নিয়োগ, মাদক ব্যবসা ও সোনা চোরাচালানীর যশোর অঞ্চলের সমন্ময়কের দায়ীত্ব পালন করতেন পুলিশের যশোর রিজার্ভ অফিসের সহকারী আরও এএসআই আশীষ কুমার সাহা। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ছাতরা গ্রামের কালু বিশ্বাসের ছেলে উজ্জল কুমার বিশ্বাস গত ২৮ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, খুলনা বিভাগে ১০টি জেলার ৬০টি থানার মধ্যে যশোর অঞ্চলের অন্তত ৭টি জেলার ৩৫টি থানার ওসি থেকে শুরু করে এএসআই পদমর্যাদার সকল অফিসারদের বদলী এবং পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ বাণিজ্য, মাদক ও সোনা চোরাচালান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা নির্বিগ্ন করতে ডিআইজি’র সাথে আর্থিক সমন্ময়কের দায়ীত্ব পালন করতেন পুলিশের যশোর রিজার্ভ অফিসে কর্মরত সহকারী আরও এএসআই আশীষ কুমার সাহা। অবৈধ ভাবে উপার্জিত এইসব বিপুল পরিমান টাকা ডিআইজি মঈনূল হক’র নিকট-আত্মীয়দের কাছে পৌছানোর জন্য যশোরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও নগদ-বিকাশ ব্যবহার করে টাকা পাচার করতেন আশীষ সাহা। এই সকল ব্যবসায়ীর মধ্যে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাসিন্দা উজ্জল কুমার বিশ্বাস একজন। উজ্জলকে মামলার ভয়-ভীতি ও জিম্মি করে তার অন্তত ৩টি ব্যাংক হিসাব ও নগদ-বিকাশ থেকে অ-স্বাভাবিক টাকা লেন-দেন করাতে বাধ্য করেন। এক পর্যায়ে উজ্জল তার একাধিক ব্যাংক হিসাব থেকে অস্বাভাবিক টাকা লেন-দেনের কারনে মানি লন্ডারিং মামলার বিষয়টি অবগত করান একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। পরে ভয়ে উজ্জল টাকা পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতেই তার ওপর ক্ষিপ্ত হন আশীষ কুমার সাহা। বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ফের টাকা পাঠানোর অপচেষ্টা করে। আশীষ কুমার সাহার মাধ্যমে ডিআইজি’র এহেন টাকা পাচারের বিষয়টি নিয়ে উজ্জল কুমার বিশ্বাস গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর যশোর প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোরে কর্মরত একজন পুলিশ অফিসার এই প্রতিনিধিকে জানান, যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, মাগুরা ও নড়াইল, জেলার ৩৫টি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), ইন্সপেক্টর (তদন্ত), ইন্সপেক্টর (অপারেশন), ইন্সপেক্টর (ক্রাইম),সাব ইন্সপেক্টর ও এএসআই পদবীর বদলী, পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ বাণিজ্যসহ ডিআইজি’র সকল প্রকার অবৈধ আর্থিক লেন-দেন করতেন এএসআই আশীষ কুমার সাহা। পুলিশের অনেকে আশীষ কুমার সাহাকে চিনে থাকেন ডিআইজির ক্যাশিয়ার হিসেবে। নাম না বলার শর্তে সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত একজন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, ডিআইজি মঈনূল স্যার ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর খুলনা ডিআইজি হিসেবে যোগদান করেন এবং গত ২২ আগষ্ট পুলিশ একাডেমী সারদা বদলী হন। প্রায় দুই বছর চাকুরী করা কালিন সময়ে খুলনা বিভাগের ৬০টি থানার প্রতিটিতে অন্তত দুইজন করে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদলী করেছেন। প্রতি ওসি থেকে স্থান ভেদে যশোর কোতয়ালী থানায় ৮০ লাখ, সাতক্ষীরা থানায় ৭০ লাখ, কলারোয়া থানায় ৩৫ লাখ, কোটচাঁদপুর থানায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে বদলী করেছেন। গড়ে থানাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা হিসেবে ১২০ জনের কাছ থেকে ৬০ কোটি এবং ইন্সপেক্টর (তদন্ত), অপারেশন, ক্রাইম ২লাখ থেকে ৫ লাখ এবং এসআই, এএসআই বদলীর ক্ষেত্রে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা এবং পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে নিতেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। যার গড় হিসাব করলে দেখা যায় ২ বছরে শুধুমাত্র বদলী ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জন করেছেন প্রায় ৪’শ কোটি টাকা। এবং মাদক ও সোনা চোরাচালান থেকে শতকোটি টাকা। সব মিলিয়ে ডিআইজি মঈনূল হক প্রায় ৫’শ কোটি টাকা শুধু খুলনা বিভাগ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন। এই টাকার বেশির ভাগই লেন-দেন করতেন এএসআই আশীষ কুমার সাহা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য প্রতিটি থানায় ডিআইজির নির্দেশক্রমে একজন করে অফিসার মনোনীত করে সমগ্র খুলনা বিভাগের পুলিশ অফিসার বদলী বাণিজ্যের বিশাল রাম-রাজত্ব কয়েম করতেন আশীষ কুমার সাহা। অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডিআইজি মঈনূল হক ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার কারনে বিগত ২০০১ সালে তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে নিয়োগ পান। সে কারনে তিনি সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ আস্থাভাজন ছিলেন। এ কারনে খুলনাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নীরিহ ও নিরস্ত্র ছাত্র জনতার বুকে গুলি চালাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নাই। তিনি এই অবৈধ টাকায় কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি কিনেছেন। কানাডার বাড়িতে তার ছেলে থাকেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। একাধিক সুত্রের দাবী তিনি যে কোন সময় কানাডায় পাড়ি জমাতে পারেন। ডিআইজির সাথে সখ্যতার সুবাদে আশীষ কুমার সাহাও ফুলে ফেপে তার নিজ ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিরগ্রামে কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ি, কয়েক একর কৃষি জমি, শিরগ্রাম বাজারে একাধিক দোকানঘরসহ ভারতেও বাড়িঘর ও জমিসহ শতকোটি টাকার অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনিও যে কোন সময় ভারতে পাড়ি জমাতে পারেন বলে জানা যায়। আশীষ কুমারের বিপুল পরিমাণ সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন লোহাগড়া বাসিন্দা ও যশোরের ব্যবসায়ী উজ্জল কুমার বিশ্বাস। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারনে হঠাৎ ডিআইজি বদলী হওয়ায় মোটা অংকের অর্থ লগ্নীকারী খুলনা বিভাগের প্রতিটি থানার ওসি, তদন্ত, অপারেশন, ক্রাইম, এসআই ও এএসআইগণ চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। যে কোন সময় তাদের বদলী হতে পারে এমন আতংকে লগ্নীকৃত টাকা মাঠ থেকে তুলতে না পারার হতাশা তাদের তাড়া করছে। বিভিন্ন থানা এলাকার স্থানীয়দের কাছে খোজ-খবর নিয়ে জানা যায়, লগ্নীকৃত টাকা ঘরে তুলতে মাঠ পর্যায়ের সকল পদবীর অফিসাররা মরিয়া হয়ে দিক বিদিক ছুটে চলেছেন।
এ বিষয়ে এএসআই আশীষ কুমার সাহার মোবাইল ০১৭১৪৭৯০৮১০ ও ০১৬১৪৭৯০৮১০ নম্বরে একাধিকবার ফোন করে সুইচ বন্ধ পাওয়া যায়।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির ঘুষ অনিয়ম-দুর্নীতির নেপথ্যে এএসআই আশীষ"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*