নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শোকাহত দেশি-বিদেশি নাগরিকেরা। আজ সোমবার সকাল ১০টা ২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিকসহ বিদেশি নাগরিকেরা।
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আর্মি স্টেডিয়ামে যে মঞ্চটি তৈরি করা হয়, সেখানে তিনটি মরদেহ আনা হয়। দুটি কফিন ঢাকা ছিল বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে। আরেকটি ঢাকা ছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা দিয়ে। হামলায় পাঁচ দেশের নাগরিকেরা নিহত হওয়ায় মঞ্চের পেছনে পাঁচটি দেশের পতাকা টাঙানো হয়। মাঝে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। বাঁ দিকে প্রথমে ভারতের এরপর ইতালির, জাপানের ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ছিল।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলায় নিহত দুই বাংলাদেশি ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও ইশরাত আকন্দ এবং এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অবিন্তা কবীরের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় অবিন্তার স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সান্ত্বনা দেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিহত অপর চারটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও কথা বলেন। ১০টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী আর্মি স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে কমান্ডার মিনহাজ নিহত ব্যক্তিদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ভারতের হাইকমিশনার, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইতালির রাষ্ট্রদূতেরা শ্রদ্ধা জানান। জঙ্গি হামলায় ভারতের একজন, জাপানের সাতজন, ইতালির নয়জন এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। রাষ্ট্রদূতেরা কেউ হাত জোড় করে, কেউবা মাথা নিচু করে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকেরা এক সঙ্গে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
স্বজনদের কাছে লাশ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: জাহিদুল করিমসকাল ১০টা ১৫ মিনিটে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এবং এরপর নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা জানান। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পরিবারের স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে চলে যান।
আর্মি স্টেডিয়ামে নিহত ১৭ বিদেশির মরদেহ আনা হয়নি। তাঁদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে হস্তান্তর করা হবে।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মঞ্চ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ১৪ দল, ১১ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর গতকাল রোববারই হস্তান্তর করা হবে—এই আশায় স্বজনেরা সকাল থেকেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) অপেক্ষা করতে শুরু করেন। পরে সিএমএইচ থেকে তাঁদের আজ সকাল ১০টায় আর্মি স্টেডিয়ামে আসতে অনুরোধ জানানো হয়। জানানো হয় সেখানেই মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
গুলশানে জঙ্গি হামলার রক্তাক্ত সমাপ্তি হয়েছে। তবে এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি জাতি। সরকার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। গতকাল ভোর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের অফিস-আদালতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে শোক পালন শুরু হয়। আজও শোক পালন করছে জাতি।
গুলশানে নিহতদের জাতির শ্রদ্ধা

Be the first to comment on "গুলশানে নিহতদের জাতির শ্রদ্ধা"