নিউজ ডেস্ক : জঙ্গিবাদের অর্থদাতা পরামর্শদাতাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গোলিয়ার আসেম সম্মেলন থেকে ফিরে এসে রবিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চান, গুলশান হামলার পর জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন অনেকে। এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন কি না? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের কথা আলাদা। এদের বাইরে যাদের মধ্যে ঐক্য দরকার, তাদের মধ্যে ঐক্য হয়েছে।’ গুলশান হামলায় উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কোনো অভাবে নেই, ভালো খায়, ভালো পড়ে, তারাই এখন জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। যেখানে তাদের জন্য কোনো কিছুই অপূরণীয় থাকে না, সেখানে কেন তারা এটা করছে, এর যৌক্তিকতা কী? তারা এখন বেহেস্তের হুর পরী পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এর কী যৌক্তিকতা? কারা তাদের পেছন থেকে উসকাচ্ছে?
ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক দুটি জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষ খুন করলে বেহেস্তের দরজা খোলে না। এই তরুণদের কারা অস্ত্র দিচ্ছে, কারা অর্থ যোগাচ্ছে, তাদের তথ্য সম্মিলিতভাবে খুঁজে বের করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে সাম্প্রতিক এশিয়া-ইউরোপ (আসেম) শীর্ষ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার সন্ধ্যায় উলানবাটোর থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। এর আগেও বিদেশ সফরের পর বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে বিদেশ সফরের বাইরেও দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানে দেশের নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেও এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশিদের চাইতে দেশের অনেকেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সক্রিয়। সংবাদ সম্মেলনের আগে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসেম সম্মেলনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। ফ্রান্সের নিসে জঙ্গি হামলার নিন্দা প্রকাশ করার পাশাপাশি হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন তিনি। তুরস্কে সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রেক্ষাপটে বলেন, বাংলাদেশ সবসময় অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা যাওয়ার বিপক্ষে।
আসেম সম্মেলনের সাইডলাইনে জার্মানির চ্যান্সেলর ভারতের উপ রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গুলশান হামলায় নিহতদের বিষয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তাদের গুলশান হামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে অবহিত করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাইকা তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন।
এছাড়া সম্মেলনে জার্মানির প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জোহান স্নাইডার, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াও ও মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি সাখিয়াগিন এলবেগদর্জের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠক করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
Be the first to comment on "জঙ্গিবাদের অর্থদাতাদের ছাড় দেয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী"