নিউজ ডেস্ক: রাত ৩টা থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আব্দুস শুক্কুর বাবুল; উদ্দেশ্য ঈদে সপরিবারে বাড়ি যেতে ট্রেনের টিকেট কেনা।
সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেসের চারটি টিকেট পেলেন বাবুল। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ এই সংখ্যক টিকেটই কিনতে পারেন।
হাতে টিকেট নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তিনি বললেন, “খুবই ভালো লাগছে, এখন আর টেনশন নেই।”
বাবুলের মতোই মঙ্গলবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর টিকেট নিয়ে কাউন্টার থেকে বেরিয়ে আসেন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি স্টেশনে ছিলেন রাত সাড়ে ৯টা থেকে।
“রাত সাড়ে ৯টায় আমি এসে লাইনে দাঁড়াই। ১২টার সময় ছেলে এসে আমার বদলে লাইনে দাঁড়িয়েছিল। ভোররাতে ছেলেকে পাঠিয়ে নিজে আবার এলাম। এখন টিকেট পেলাম।”
বুধবার সকালে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। এদিন থেকে ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করেছে রেল বিভাগ। ৬ জুলাই ঈদ ধরে পর্যায়ক্রমে অন্যদিনের টিকেট বিক্রি হবে।
* ২৩ জুন ২ জুলাইয়ের টিকেট
* ২৪ জুন ৩ জুলাইয়ের টিকেট
* ২৫ জুন ৪ জুলাইয়ের টিকেট
* ২৬ জুন ৫ জুলাইয়ের টিকেট
* প্রতিদিন বিক্রি ১৮ হাজার টিকেট
* ফিরতি টিকেট ৪ জুলাই থেকে
ঈদের সময় সড়কে যানজটের ভোগান্তি এড়িয়ে স্বচ্ছন্দ্যময় যাত্রায় অনেকে ট্রেনকেই বেছে নেন। তবে টিকেট না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ থাকে বরাবরই।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, এবার ঈদের সময়টাকে প্রতিদিন ৩৩টি ট্রেনের ১৮ হাজার টিকেট বিক্রি হবে।
শুক্কুর আলী ও নজরুলের মতো রাত থেকে দাঁড়ালেও প্রত্যাশিত টিকেটি পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ।
সিরাজগঞ্জের টিকেট না পেয়ে রাজশাহীর কিনেছেন তিনি। তাতেও সন্তুষ্ট এই ছাত্র বললেন, “এখন আর টেনশন নেই, টিকেট তো পেয়েছি।”
যাত্রীদের সুবিধার জন্য এবার ঈদের ১০ দিন আগেই অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করা হয়েছে বলে জানান রেল কর্মকর্তা সিতাশু।
কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টার সংখ্যাও আগের চেয়ে তিনটি বাড়িয়ে ২৩টি করা হয়েছে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে আলাদা একটির কাউন্টার।
সবাইকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট নিতে দেখা যাচ্ছে। কারও কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, নেত্রকোনার কাউন্টারে টিকেট প্রত্যাশী কাউকে দেখা যায়নি। তবে তখনও ১ জুলাইয়ের টিকেট ছিল বলে কাউন্টারের দায়িত্বরত রেলকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
ট্রেনে ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির প্রথম দিন বুধবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিড় ছিল এমনই। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
ট্রেনে ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির প্রথম দিন বুধবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিড় ছিল এমনই। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
স্টেশন ব্যবস্থাপক সিতাংশু জানান, এবার ৬৫ শতাংশ টিকেট উন্মুক্ত বিক্রির জন্য রাখা আছে। মোবাইল ও অনলাইনে বিক্রির জন্য টিকেট রয়েছে ২৫ শতাংশ।
এছাড়া ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ টিকেট রাখা আছে বলে জানান তিনি।
রেল কর্মকর্তা সিতাংশু বলেন, এবার ঈদে বিভিন্ন টেনে অতিরিক্ত ৮৪টি বগি সংযোজন করা হবে। এছাড়া ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিন জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চলবে।
ঈদ উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকবে বলে রেলওয়ে জানিয়েছে।
স্টেশনে টিকিট বিক্রির শৃঙ্খলা রক্ষায় রেলের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ-র্যাবও রয়েছে। কোনো ধরনের ঝামেলা কিংবা কারও কোনো অভিযোগ সকালে শোনা যায়নি।
রেল নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, তার বাহিনীর ১০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন স্টেশনে।
জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, টিকেট কালোবাজারিসহ অনিয়ম ঠেকাতে তার বাহিনীর সদস্য কাজ করছে ১২০ জন।
কালোবাজারি সন্দেহে আট থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Be the first to comment on "ট্রেনের ঈদটিকেট বিক্রি শুরু"