নিউজ ডেস্ক॥ ক্ষমতাসীন দলের তকমা লাগিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন নেতারা। যুবলীগ-ছাত্রলীগের কেউ কেউ হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। যার বেশিরভাগই অবৈধ। আর এই অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এত বছর ধরে দুর্নীতি করে আসাদের একটি দীর্ঘ তালিকাও তৈরি করছে সংস্থাটি। দুদক সূত্র জানায়, এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া দুই প্রভাবশালী নেতার পাশাপাশি আরো কয়েকজনের অঢেল সম্পদের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিট এরই মধ্যে সবার তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঠিকাদার জি কে শামীম ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করছে দুদক। এই তিন নেতা ছাড়াও সাবেক দুই মন্ত্রীর সম্পদের অনুসন্ধানও করছে সংস্থাটি।
সূত্র জানায়, সরকারদলীয় অনেকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অবৈধ সম্পদসহ নানা অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীর সাবেক ও বর্তমান দুই এমপি, খুলনার সাবেক এক এমপি, পিরোজপুর ও বরগুনার সাবেক দুই এমপি, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের সাবেক এমপি, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা, যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ও সাবেক একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলের নাম দুদকের নথিতে রয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাই, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতিসহ অনেকের নাম আছে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের তালিকায়। দুদক বলছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতিসহ বর্তমান ও সাবেক অন্তত ‘হাফ ডজন’ এমপির বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধান নথিভুক্ত হলেও পুনরায় সচল করে দেখা হবে সঠিক অনুসন্ধান হয়েছে কি না। দুদকের একটি সূত্র জানায়, জি কে শামীম, খালেদ ও ফিরোজের সম্পদের অনুসন্ধান গত সপ্তাহেই শুরু হয়েছে। শুক্রবার র্যাবের অভিযানে জি কে শামীমের নিকেতনের কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে রাখা ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার নথি, ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নগদ ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুধবার রাতে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পদাক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে নগদ অর্থ, অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রাথমিক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, খালেদের অবৈধ অর্থের উৎস টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি থেকে। এছাড়া, হালে বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনোর প্রচলন ঘটিয়ে শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন যুবলীগের এই নেতা। শুধু তাই নয়, ক্যাসিনো থেকে আয়ের ভাগ যেতো বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রশাসনের একাংশের কর্মকর্তার মাঝে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, খালেদের সঙ্গে দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে যারাই অবৈধ অর্থ ও সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে সংস্থাটি।
এর আগে গত শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যারা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় একের পর এক তাদেরকে ধরা হচ্ছে। সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কেউ শাস্তির বাইরে যাবে না। অভিযোগের সত্যতা থাকলে যুবলীগ নেতা সম্রাটের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এর আগের দিন শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বা যারা দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দুদকও কাজ করবে। জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪হাজার ৫শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন চাওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের বিদায়ী দুই নেতার নামও রয়েছে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানের তালিকায়। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হচ্ছে। তবে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।
দুদক ভাবছে এখন!

Be the first to comment on "দুদক ভাবছে এখন!"