নিউজ ডেস্ক: নাটোরে বৃদ্ধ এক খ্রিস্টান মুদি দোকানিকে কুপিয়ে হত্যার পর আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবর এসেছে।
বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাটির বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকার খ্রিস্টানপাড়ায় নিজের দোকানে রোববার সকালে সুনীল গোমেজের (৬০) উপর হামলা হয়।
সুনীল খ্রিস্টানপাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। বাসার পাশেই তার দোকান। তার ভাই প্রশান্ত গোমেজ দিনাজপুরে একটি চার্চের ফাদার, যে জেলাটিতে সম্প্রতি এক খ্রিস্টান পাদ্রি আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সকালে সুনীলের লাশ পাওয়ার পর বিকালে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসেইটে এই হত্যাকাণ্ডে আইএসের দায় স্বীকারের খবর আসে।
আইএসের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত আমাক সংবাদ সংস্থাকে উদ্ধৃত করে এই খবরে বলা হয়, বনপাড়ায় এক খ্রিস্টান এবং বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করেছে আইএসের যোদ্ধারা।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মং শৈ উ-কে গত ১৪ মে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের উপর আরও কয়েকটি হামলায় আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তার খবর এলেও তা নাকচ করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশীয় জঙ্গিরা এগুলো ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম দিচ্ছে।
বনপাড়ায় খ্রিস্টান দোকানিকে হত্যার পর আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবর সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে
বনপাড়ায় খ্রিস্টান দোকানিকে হত্যার পর আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবর সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে
বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই দয়াল কুমার সাংবাদিকদের বলেন, দোকানে ছিলেন সুনীল গোমেজ। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।
সুনীলের ঘাড়ের পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে এসআই দয়াল জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুনীলের রক্তাক্ত দেহের অর্ধের দোকানের ভেতর, আর অর্ধেক বাইরে পড়ে আছে। ঘাড়ের পেছনে ধারাল অস্ত্রের জখম।
দোকানসংলগ্ন যে বাড়িতে স্ত্রী জাসিনকা গোমজকে নিয়ে থাকতেন সুনীল। তার বাড়ির কাছেই থাকেন তাদের মেয়ে স্বপ্না গোমেজ।
স্বপ্না বলেন, তাদের বাসা বাবার বাসা থেকে দুই বাড়ি পরে। তারা কেউ কোনো শব্দ শোনেননি।
“দুইজন ভ্যানঅলা যাওয়ার সময় বাবার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তারাই আমাকে খবর দেন।”
সুনীলের সঙ্গে এলাকায় কারও কোনো বিরোধ ছিল না জানিয়ে মেয়ে স্বপ্না বলেন, তারা এই খুনের কারণ বুঝে উঠতে পারছেন না।
সুনীলের মেয়ে জানান, তার বাবা স্থানীয় চার্চে এক সময় মালির কাজ করতেন। তার চাচা প্রশান্ত গোমেজ দিনাজপুরে একটি চার্চের ফাদার।
উত্তরাঞ্চলে কয়েকটি হত্যা ও হামলার ঘটনায় দেশি জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত থাকার কথা বলে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সুনীল হত্যার পেছনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সী সাহাবুদ্দিন, সহকারী পুলিশ সুপার শপিকুল ইসলামসহ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন।
উত্তরাঞ্চলে এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদীর পশ্চিম পাড়ের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ সকালে হাঁটাহাঁটি করতে বের হলে কুড়িগ্রাম পৌরসভার গাড়িয়ালপাড়ার ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে তার বাড়ির কাছে তিন মোটরসাইকেল আরোহী গলা কেটে হত্যা করে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাতে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ গ্রামে ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালে গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এতে দুইজন আহত হন।
গুলি ও বোমা ছুড়ে পালানোর সময় স্থানীয় জনতা এক যুবককে ধাওয়া দিয়ে আটক করে পুলিশে দেয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর সকালে দিনাজপুর শহরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা ইতালীয় নাগরিক পিয়েরো পারোলারিকে (৭৮) গুলি করে আহত করে।
পিয়েরো পারোলারি দিনাজপুরের সুইহারি ক্যাথলিক চার্চের ফাদার। পেশায় চিকিৎসক এ ইতালীয় নাগরিক শহরের সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
গত বছরের ৫ অক্টোবর ধর্মীয় দীক্ষা নেওয়ার কথা বলে তিন যুবক ঈশ্বরদীর পৌর এলাকার স্কুলপাড়ায় লুক সরকারের ভাড়া বাসায় গিয়ে তাকে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা চালায়। লুক সরকার পাবনার ঈশ্বরদীর ফেইথ বাইবেল চার্চ অব গডের যাজক ছিলেন।
প্রতিবাদে মানববন্ধন
এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার বিকেলে বনপাড়া বাজারে নাটোর-পাবনা সড়কে মানববন্ধন করেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।
Be the first to comment on "নাটোরে খ্রিস্টান দোকানিকে কুপিয়ে হত্যায়ও ‘আইএস’"