নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলে লগ্নি নেওয়া টাকা ফেরত না দিতে একজন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীসহ তার স্বজনদের ফাঁসাতে এক গৃহবধু নিজের শরীরে কথিত এসিড ডেলে মিথ্যা মামলা করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধু এর আগেও কয়েকটি পরিবারের বিরুদ্ধে থানাসহ কোর্টে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করারও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, নড়াইল জেলার সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের বাহিরগ্রামে।
সরেজমিন অনুসন্ধ্যান, মামলার নথি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই গ্রামের কামরুজ্জমানের মেয়ে তানিয়া বেগম (২৭) এর সাথে একই গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফা মোল্যার ছেলে বিছালী ব্যাবসায়ী জুয়েল মোল্যার (২৮) লগ্নি দেওয়া টাকাকে কেন্দ্র করে তানিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। জুয়েল মোল্যা পেশায় একজন বিছালি (খড়) ব্যাবসায়ী। অপর দিকে তানিয়া খানম একজন গৃহবধু হলেও এলাকায় সুদে কারবারী, ধাইনো (ধান) ও মামলাবাজ তানিয়া বলে বেশ পরিচিতি রয়েছে। তানিয়া ও জুয়েল, এদের মধ্যে ধর্ম আত্বীয়তার বন্ধন রয়েছে। একে অপরের ভাই-বোন। জুয়েল মোল্যাকে আত্বীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে সূচতুর, ধুরন্ধার তানিয়া খানম বিছালী (খড়) দেওয়ার কথা বলে জুয়েলের কাছ থেকে কৌশলে নগদ ৫লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তার প্রতি জুয়েলের বিশ্বাস করার জন্য গত বছরের ৭ মে তানিয়া তার ভগ্নিপতি আমিনুর রহমানের নামীয় ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক নড়াইল শাখার স্বাক্ষরযুক্ত সমপরিমান টাকার একটি চেক জুয়েলের ভাই সোহেলকে প্রদান করে। যার হিসাব নং ০২২০১২২০০০০৪২২৪, চেক নং বি২৯৮৩৭১২। তাদের মধ্যে কথা ছিলো ওই সময়ে ধানের চলতি ব্লক শেষে সমুদয় টাকা দিয়ে চেক ফেরত নিবে। কিন্ত তানিয়া নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে টালবাহানা করে জুয়েলকে ঘুরাইতে থাকে। টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পরিবারের মধ্যে বেশ বাকবিতন্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। মামলা দায়েরের এক থেকে দেড় মাস আগে তানিয়া ও তার মা আছমা বেগম ও বোন মিনি বেগম জুয়েলের বাড়িতে
গিয়ে তার ওপর চড়াও হয়ে মারধোর করে। কিছুদিন পার হলে তানিয়া উল্টো দাবী করেন জুয়েলের কাছে সে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা পায় মর্মে মাতব্বরের কাছে জানায়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বাহিরগ্রাম স্কুলমাঠে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিসে তানিয়ার দাবীকৃত টাকার কোন স্বাক্ষী বা, তথ্য প্রমান দেখাতে না পারায় শালিসগনের কাছে মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়। অপরদিকে জুয়েলের পাওনা টাকার সত্যতা পায়। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য জুয়েলের ভাই সোহেল গত বছরের ২৯ জুন নগদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা করেন। এবং একই তারিখে ডিজঅনার করে ২ জুলাই আইনজীবির মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। নোটিশটি ১২ জুলাই প্রাপক প্রাপ্তিস্বীকার করেন। জুয়েলের ভাই সোহেল বাদী হয়ে তানিয়ার ভগ্নিপতি আমিনুর রহমানকে আসামী করে ৫ অক্টোবর নড়াইলের বিজ্ঞ আমলী আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করেন। যার নং সিআর ১৪০/২০, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
টাকা পরিশোধের নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে তানিয়া খানম, তার মা আছমা বেগম,বোন মিনি বেগম ও তার স্বামী আমিনুর রহমান, চেকের মামলা করার আগেই জুয়েলদের ফাঁসানোর এইএসিড নাটকের ষড়যন্ত্র করেন। ষড়যন্ত্র মোতাবেক তানিয়া এজাহার নামীয় ৭জনের নামে ১৩ আগষ্ট নড়াইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন। যার নং ৫১৪/২০। সাধারণ ডায়েরীটি সাব ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান তদন্ত করেন। জিডিতে উল্লেখিত ঘটনাবলি সরজমিনে তদন্ত করে কোন সত্যতা পাওয়া যায় নাই মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তানিয়ার ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত রুপ নেয় ১৭ আগষ্ট রাত সাড়ে ৯টায়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক স্বামী আমিনুর রহমানকে চেকের মামলা থেকে বাঁচাতে তানিয়ার বোন মিনি বেগম তানিয়ার পিঠে গরম পানি ঢ়েলে শরীরের ৮ থেকে ১০ শতাংশ ঝলসে দেয়। পরে মিনি বেগম বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত মুজিবর মোল্যার ছেলে অহিদুল মোল্যা, আইয়ুব মোল্যার ছেলে জুলহাস মোল্যা, মৃত বদিয়ার মোল্যার ছেলে বিপ্লব মোল্যা, মুজাহার ওরফে সরু মোল্যার ছেলে তুহিন মোল্যা, মৃত গোলাম মোস্তফা মোল্যার ছেলে জুয়েল মোল্যা, কুদ্দুস মোল্যার ছেলে হৃদয় মোল্যা ও ছবি মোল্যার ছেলে টিটো মোল্যাকে আসামী করে ১৮ আগষ্ট নড়াইল সদর থানায় এসিড দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ৯/২০। তানিয়া-মিনি ষড়যন্ত্রের প্রথম দিকে সফলও হলেও বাদ সাঁধে পুলিশ প্রশাসন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুকান্ত সাহা ২মাস দীর্ঘ তদন্ত শেষে আলামত জব্দ করে পরিক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ মহাখালি ঢাকায় প্রেরন করেন। ফরেনসিক বিভাগের রাসায়নিক পরিক্ষক পিংকু পোদ্দার ও মজিবর রহমান শরীফ রিপোর্টের ফলাফর জানায় ভিকটিম তানিয়ার ব্যবহৃত কামিজ,স্যালোয়ার ও ওড়নায় এসিড পাওয়া যায় নাই এবং পোশাকের সীলমোহর অক্ষত রয়েছে। সব কিছু পর্যালোচনা করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিথ্যা মামলার চুড়ান্ত (ফাইনাল) প্রতিবেদন দেয়। এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য আদালতের কাছে সুপারিশ করেন। মামলায় বাদী পক্ষ নারাজি দেওয়ায় পুনরায় তদন্তের জন্য সিআইডিতে প্রেরন করেন। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। মামলার স্বাক্ষী মোছা: আয়েশা বেগম, মিরান হোসেন, মিশার হোসেন, নরেশ কুমার নন্দী ও আনোয়ার হোসেন নড়াইলের বিজ্ঞ আদলতে ১৬৪ ধারায় ঘটনাটি সাজানো এবং সম্পূন্য মিথ্যা বলে জবানবন্দি দেয়। আয়েশা বেগম, আদালতকে আরও জনায়, তিনি বাহিরগ্রাম বাজার থেকে পুরাতন কাপড় বিক্রি করে তখন বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বাবু মোল্যার বাড়ির সামনে পৌছালে তানিয়া ও মিনির সাথে দেখা হয়। মিনি তখন তানিয়াকে বলছে একটু দাগ টাগ নাহোলি কেসে জোর হয় না, তোর ভয় নাই ব্যাটারির পানিতে কিছু হবে নানে। তোর পিঠে অল্প এট্টু (একটু) ঢাইলে দিবানি। আয়েশা বেগম ওখান থেকে সরে আসার কিছুক্ষণ পর চিৎকার ও চেচামেচি শুনতে পায়।
এজাহারে উল্লেখিত স্বাক্ষী জিন্নাত মোল্যা, সাফিয়া বেগম, সজিব মোল্যা ও ওবায়দুর রহমান জনায় তারা তানিয়ার মুখ থেকে শুনেছেন যে, আসামীরা তাকে এসিড মেরেছে, চোখে দেখেন নাই।
নড়াইলে বর্তমান আলোচিত নাম তানিয়া জামান। তিনি পিছিয়ে নেই বৈবাহিক দিক দিয়েও। অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার । বনিবনা না হওয়ায় ছেড়ে যান একাধিক স্বামী।
…………………….( চলবে)
Be the first to comment on "নড়াইলে এসিড নাটকে ব্যার্থ,পুলিশকে ফাঁসানোর চেষ্টা"