নিউজ ডেস্ক : গোপালগঞ্জের আড়–য়া কংশুর গ্রামের পান্ডে বাড়ীতে এখন চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার সকালে পাবনার অনুকুল চন্দ্র সেবা শ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডে (৬০) হত্যাকান্ডের খবর এসে পৌছিলে তার গ্রামের বাড়ীতে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে ক্রমান্বয়েই পান্ডে বাড়ীর বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। ওই বাড়ির লোকজনদেরকে সমবেদনা জানাতে সকাল থেকেই ওই বাড়িতে এলাকার মানুষের ভীড় জমে। চারিদিকে ওঠে নিন্দার ঝড়।
তাঁর স্বজনরা জানান, গত সপ্তাহে শেষবারের মতো আড়–য়া কংশুর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন অনুকুল ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত নিত্যরঞ্জন পান্ডে। ফাঁকে গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম এলাকায় বড় মেয়ে নন্দিতা বাগচীর (৩২) ভাড়াবাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিরেন তিনি। ওই সময় বাবার সাথে একান্তে কথা হয় নন্দিতার। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে এমএ শেষ পর্বে অধ্যয়নরত এরমাত্র ছোট বোন স্বন্দিপা পান্ডের বিয়ের ব্যাপারে কথার একপর্য়ায় বড় মেয়ে নন্দিতা তার বাবাকে বলেছিলেন, “বাবা তোমার বয়স হয়েছে, কখন মরে যাবে, আগে তুমি স্বন্দিপার বিয়ে নিয়ে চিন্তা করো।” তার উত্তরে বাবা বলেছিলেন, “ আমি তাড়াতাড়ি মরবো নারে- মাগো, তোরা কোন চিন্তা করিস না।” দেখিস, স্বন্দিপার একটা ভাল বিয়ে হবে। কথাগুলো বলতে বলতে অঁেঝারে কাঁদছিলেন নন্দিতা। বিলাপ করে বলছিলেন আমার বাবাতো অনেক দিন বাঁচলেন না। কিন্তু এমনভাবে তাকে চলে যেতে হবে আমি তা কখনও ভাবিনি।
গোপালগঞ্জের বাবরগাতী সরকারি প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক নন্দ দুলার পান্ডে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার বাবার কি অপরাধ ছিল? তিনি একজন ধর্ম প্রচারক। ধর্মের কাজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেরিয়েছেন। ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি পাবনার হেমায়েতপুরে ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের সেবাশ্রমে সেবক হিসেবে কাজ করছেন। সেখানে তাকে (বাবা) সহঃ প্রতি ঋত্ত্বিক উপাধী দেওয়া হয়েছিল। আমার বাবাতো কোন অপরাধ করেননি? এলাকার সকলে বাবাকে খুব সম্মানের চোঁখে দেখতেন। অমি আমার বাবার নৃশংসকান্ডের হত্যার বিচার চাই। সরকার প্রধানের কাছে তার বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানান।
স্বামীর শোকে মূহ্যমান দুলু হাজরা (৫৫) এখন বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, এমন নৃশংসভাবে কোন মানুষ তার স্বামীকে প্রকাশ্যে দীবালোকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে। তার স্বামী ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। প্রতিদিন খুব ভোরে তিনি হাঁটতে বের হতেন। স্বামীই ছিলেন তার সংসারের একমাত্র অবলম্বন। এখন তাঁকে কে দেখবে? অবিবাহিত মেয়েটির বা কি হবে? তিনি তার স্বমীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে বলেন, আর কত নৃশংসতা দেখবো! প্রতিদিনই এধরনের হত্যাকান্ড ঘটছে। এসব দেখার কি কেউ নেই।
আড়ূয়া কংশুর গ্রামের মনোজ বিশ্বাস (৬৫) বলেন, নিত্যরঞ্জন তার ছোটবেলার বন্ধু। অতি নীরিহ গোচের মানুষ ছিলেন তিনি। ৫-৬ মাস পর গ্রামে আসতেন। সকলের সাথে ভাল ভাল ব্যবহার করতেন। তাকে এভাবে অকালে চলে যেতে হবে তা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর টার্গেট করে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে। এসব কারা করছে-সরকার তাদের ধরছে না কেন? এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা কোথায় যাবো। কে দেবে আমাদের নিরাপত্তা।
গ্রামের বাড়ী আড়–য়া কংশুর গ্রামের পান্ডে বাড়িতে নিত্যরঞ্জনকে সমাহিত করা হবে বলে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান নিহতের একমাত্র ছেলে নন্দ দুলাল পান্ডে। শেষ খবর পর্যন্ত লাশ এখনও এসে পৌঁছায়নি। লাশ এসে পৌঁছিলে তাকে সমাহিত করার কাজ সম্পন্ন করা হবে।
Be the first to comment on "পাবনায় পুরোহিত হত্যাকান্ড: গোপালগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম"