শিরোনাম

বার্নিকাটের বক্তব্যের সমালোচনায় উত্তপ্ত সংসদ

নিউজ ডেস্ক: ‘বাংলাদেশ দখল করার কোনো ইচ্ছা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই’- মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের এমন বক্তব্যের সমালোচনায় জাতীয় সংসদে সরকারি দলের এমপিদের মধ্যে বাকযুদ্ধ হয়েছে। আর এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রবীণ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অনির্ধারিত এই বিতর্কের সূচনা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এসময় সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া।

সুরঞ্জিত বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন- ইচ্ছা করলে তারা বাংলাদেশ দখল করতে পারতো। এই ধরনের হুমকি কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্জিত। আমরা এর নিন্দা জানাই। এটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জোরালো আপত্তি জানাবে বলে আশা করি।’

সামনের সারিতে মন্ত্রীদের অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সংসদ চালাতে হলে সামনের সারিতে অন্তত একজন মন্ত্রী হলেও উপস্থিত থাকার দরকার ছিল।’ এসময় সামনের সারিতে থাকা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দিকে তাকিয়ে হাসতে-হাসতে সুরঞ্জিত বলেন, ‘মেনন হাসছেন, যদিও উনি একজন ভেজাইল্যা মন্ত্রী। সামনের সারিতে কোনো মন্ত্রী না থাকার বিষয়টি দৃষ্টিকটু।’

এরপর ফ্লোর নিয়ে সুরঞ্জিতের বক্তব্যকে সমর্থন করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘আমরা ছোট রাষ্ট্র হতে পারি। আমরা নিম্নমধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দিকে যাচ্ছি। আমাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মান আছে। যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছি। কাজেই কেউ এই দেশ দখল করবে, এটা কোন ধরনের আচরণ? পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব তাকে (বার্নিকাটকে) ডেকে সদুত্তর নিতে। বাংলাদেশ কারও দয়ায় স্বাধীন হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা ছিল সবাই জানে। তারা সেদিন গণতন্ত্রের কথা ভুলে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সেদিন পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। সেজন্য তারা এখনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর নাময়েছিল। সেদিন ষষ্ঠ নৌবহর না নামলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। আজ বঙ্গবন্ধু নেই, তবে তার কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কি আইএস নেই? টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছে। এটা আফগানিস্তান ও সিরিয়া নয়। ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ। কাজেই কেউ চাইলেই আমাদের স্বাধীনতা লুণ্ঠন করতে পারবে না। তাদের কত বড় ধৃষ্টতা, আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে হুমকি দেয়! যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এই দেশের মানুষের সাহস অনেক বেশি শক্তিশালী। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উচিত তাকে ডেকে ব্যাখ্যা নেয়া।’

সুরঞ্জিত ও শেখ সেলিমের বক্তব্যের পরপরই ফ্লোর নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন সদস্য বললেন- মন্ত্রীরা পালিয়ে গেছেন। আমার মনে হয় তারা পালিয়ে যাননি। তারা পালিয়ে যেতে পারেন না। তার (সুরঞ্জিতের) এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করুন। কারণ উনিও (সুরঞ্জিত) একসময় মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রীরা আশপাশেই রয়েছেন। তাছাড়া আগামী দু’দিন (শুক্র ও শনিবার) ছুটি থাকায় অনেকে নির্বাচনী এলাকায় গেছেন। আমার মনে হয় উনি (সুরঞ্জিত) মনের অজান্তে এই মন্তব্য করেছেন। তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিষয়েও যা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। বরং আমাদের দেশেরই কিছু লোক বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন, বার্নিকাট সেগুলোরই ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাত্র। বাংলাদেশে কোনো তৎপরতা চালানোর কথা রাষ্ট্রদূত বলেননি।’

নানকের বক্তব্যের বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, সামনের কাতারে না দেখলেও আশেপাশের কাতারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা আছেন। তবে মাননীয় সদস্য (সুরঞ্জিত) ‘ভেজাইল্যা’ যে শব্দটি বলেছেন সেটিসহ অন্য আর কোনো অসংসদীয় শব্দ থাকলে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।

এরপর চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ দাঁড়িয়ে গতকালের সংবাদপত্রে প্রকাশিত বার্নিকাটের বক্তব্য পাঠ করে বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সম্পর্কে আমাদের কোনো কোনো সংসদ সদস্য যা বলেছেন তা সত্য নয়। বার্নিকাট বরং বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে না। এই ধরনের নীতিও তার দেশের নেই।

সরকারি দলের সদস্যদের হইচইয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, ‘বার্নিকাট যে ভাষায় বলেছেন- সেভাবে বলা উচিত হয়নি। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের চেয়ে ২০ গুণ বেশি খুন হয়েছে। আমি সুরঞ্জিত দা’র বক্তব্যের ভক্ত। তারপরেও মন্ত্রীদের নিয়ে তিনি যা বলেছেন, তা বোধ হয় ঠিক নয়।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "বার্নিকাটের বক্তব্যের সমালোচনায় উত্তপ্ত সংসদ"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*