শিরোনাম

লোহাগড়ায় অধ্যক্ষ দুর্নীতির টাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন

লোহাগড়ায় অধ্যক্ষের দুর্নীতির টাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন

নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা না কমলেও ফলাফলে ধস নেমেছে। এ অবস্থার জন্য প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ তরফদার কামরুর ইসলামকে দায়ী করছে শিক্ষকসহ অভিভাবকরা। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
নিয়োগ বাণীজ্য,আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম, অবৈধভাবে শিক্ষক বহিস্কার করে টাকার বিনিময়ে পূনর্বহাল ও ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষের দুর্নীতির প্রতিবাদ ও অপসারণ দাবী করে এলাকাবাসি মানববন্ধন, পোষ্টার ও লিফলেট বিতরন কর্মসূচি পালন করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংসদ সদস্য নড়াইল-২, মহাপরিচালক মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, রেজিস্টার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, চেয়ারম্যান যশোর শিক্ষা বোর্ড, নড়াইল জেলা প্রশাসক, ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অধ্যক্ষ তরফদার কামরুর ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার করে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র জানান, কর্তপক্ষ অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখবে। তদন্তে অধ্যক্ষসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নেয়া হবে।
বিভিন্ন অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালের একটি দৈনিক পত্রিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্য অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ওই সময় তরফদার কামরুল ইসলাম যশোর জেলার তালবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন। সেখানে সিমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মে তিনি চাকুরীচ্যুত হয়। একই বছরের ৬ অক্টবর লক্ষীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি অংশ গ্রহন করে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। অভিযোগ রয়েছে তৎকালিন সরকারের দলীয় পদে থেকে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
অভিযোগকারীরা জানান, অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। নিয়োগ ও ভর্তি বাণীজ্য, ভূয়া ভাউচার, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাত, অর্থের বিনিময়ে ছুটি প্রদান। শিক্ষকদের বেতন-ভাতার নামে অর্থ গ্রহন, কলেজে গড়হাজির থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও পরিক্ষার সম্মানী ভাতা গ্রহন, ভূয়া পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের নামে প্রায় দুই বছর বাড়িতে থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনসহ চিত্র-বিচিত্র অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি ব্যয়ের সঠিক হিসাবও দেননা হিসাব রক্ষকের কাছে। অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলেই তার ওপর ছড়ি ঘোরানো হয়। প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেন অধ্যক্ষ। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষককে তিনি অন্যায় ও অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্থ করে ফের মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পূনর্বহাল করেছেন। সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় দু’বছর অধ্যক্ষের বাড়িতে রেখে গৃহস্থলির কাজ করিয়েছেন। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। নড়াইল শহরের অদুরে তুলারামপুর গ্রামে তিনি কয়েক কাঠা জমির ওপর আলীশান বহুতল ভবন নির্মাণ করাসহ নামে বেনামে কয়েক একর জমি ক্রয়সহ বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন বিপুল পরিমান অর্থ। এ কাজে অধ্যক্ষকে সহযোগীতা করেছেন ওই কলেজের ক্লাস বিহীন শিক্ষক ঠাকুর মো: ফেরদৌস ওয়াহিদ।
এ বিষয়ে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর গিয়াসউদ্দিন ভূইয়া ও সৈয়দ শাহজাহান সিরাজ বিদ্যুত জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন ধ্বংস হয়ে মান কমে যাচ্ছে। অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় তিনি একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন। যথাযথ তদন্ত হলে তার সকল প্রকার দুর্নীতির প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অধ্যক্ষ দোষী প্রমানিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটির সম্মানার্থে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে গনমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধ করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম বলেন, সকল বিষয়ে কলেজের পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। একক সিদ্ধান্তে আমি কিছুই করিনি।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় অধ্যক্ষ দুর্নীতির টাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*