নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অশোভন আচারণ ও হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করেছেন ৪১জন শিক্ষক-কর্মচারী। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরার কাছে এ লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কলেজের ল্যাবরেটরি কক্ষে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
অভিযোগের শুনানি গ্রহণের সময়ে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী অধ্যক্ষের সামনেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সামনে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করে মানববন্ধন থেকে তার অপসারণ দাবি করা হয়। এ মানববন্ধনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে উপজেলা সদরে ব্যাপকভাবে পোস্টার লাগানো ও বিতরণ করা হয়েছে প্রচারপত্র। ৪১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কলেজের পিয়ন শিকদার শফিউল হাসানকে নিয়োগের পর থেকে গত দুই বছর ধরে নড়াইল সদরে অধ্যক্ষের নিজের বাড়িতে রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন শফিউল হাসান নিজেই। এরপর থেকে অধ্যক্ষ ও তার আত্মীয়-স্বজনেরা নানা হুমকি দিচ্ছেন বলে গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি লোহাগড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অধ্যক্ষ ও সকল শিক্ষক-কর্মচারীর সামনেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধের শুনানি গ্রহণ করেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। শুনানি নেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাবেক সাংসদ শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, আজিজুর রহমান আর্জু ও বাদশা শেখ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক বলেন, অধ্যক্ষের দুর্নীতির সাথে জড়িত পূর্বের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বর্তমান সদস্য সাবেক সাংসদ শেখ হাফিজুর রহমান ও পর্ষদের বিদ্যুতসাহী সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস থাকায় তদন্তে নিরোপেক্ষতা নিয়ে সন্ধিহান তারা।
ওই শুনানি বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে অধ্যক্ষের নানা আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষক- কর্মচারীদের মারধর ও গালাগাল করা, ছুটিসহ নানা কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, ৩-৪ জন শিক্ষক ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে নানা হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচারণ, ছয়জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বরখাস্ত করে টাকার বিনিময়ে পূনর্বহাল করা, অন্যদের প্রায়ই বরখাস্তের হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শুনানি শেষে সুবাস চন্দ্র বোস প্রস্তাব দেন, এখন দুুটি পথ আছে একটি হলো ভবিষ্যতে অধ্যক্ষ সঠিকভাবে চলবেন এর ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সমঝোতা করা। আরেকটি হলো তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী এ সময়ে তদন্ত ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একজন পিয়ন বলেন, সমঝোতা করে অধ্যক্ষ বহাল হলে এ কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি করার আর পরিবেশ থাকবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বৈঠকের এসব বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে গত শুক্রবার বলেন, ‘কলেজের ৮০ ভাগ শিক্ষক-কর্মচারী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তারা আর অধ্যক্ষকে চাইছে না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। হয়তো দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে ওই বৈঠকে অধ্যক্ষ কোনো কথা বলেননি। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা শুনানি নিয়েছেন। বিষয়টি তারা দেখবেন।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৪১শিক্ষক-কর্মচারীর লিখিত অভিযোগ"