নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে, পুলিশ ধরছে না। পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মাসহারায় মাদক ব্যবসা চলছে। অথচ নিরিহ মানুষকে ধরে এনে মাদক মামলায় দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা । চাহিদাকৃত টাকা দিতে না পারলেই ঘাড়ে মামলার ঘানি। পুলিশকে তথ্য দিলে সাথে সাথে তথ্য দাতার নাম চলে যাওয়া মাদক বিক্রেতার কাছে। পুলিশের আসামী ধরা আর ছাড়ার ব্যাবসা মাদক ব্যাবসার চেয়েও রমরমা বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা।
সোমবার (৮জানুয়ারী) লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বক্তারা এসব ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ইতনা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান টগর বলেন, আতশপাড়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শোয়াইবকে ইতনা থেকে ধরে এনে পুলিশ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। মাদকের স্পট ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম বহুবার পুলিশকে দিয়েছি। কিন্তু লাভ নেই। পুলিশ তাঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে মাদক নির্মুল কীভাবে হবে ?
মল্লিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার মোস্তফা কামাল বলেন, দোয়া-মল্লিকপুর গ্রামের অশোক বিশ্বাস (৫৫) নিরিহ ব্যক্তি। তিনি মাদকের সঙ্গে জড়িত নন। অথচ গত শনিবার সন্ধ্যায় লোহাগড়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লুৎফর রহমান তাঁকে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ধরে আনেন। আমি তাঁকে ছাড়ানোর জন্য থানায় গেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন, না হলে ২০ পিচ ইয়াবা দিয়ে মামলা দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
শালনগর ইউপি চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, এ ইউনিয়নে মন্ডলবাগ বাজার, মাকড়াইল, আপিলগেট ও রামকান্তপুর গ্রামে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। সেখানে পুলিশ যায়, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে চলে আসে। এ ইউনিয়নে ছয়জন বড় মাদক ব্যবসায়ী আছে। তাঁরা পাইকারী বিক্রেতা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা বহুবার পুলিশকে দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না। শুনেছি তারা পুলিশকে নিয়মিত মাসহারা দিয়ে থাকে, পুলিশ তাহলে আমাদের কথা শুনবে কেন !
জয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসেন বলেন, জয়পুর ইউনিয়নে মাদকের ডিলার ও সাব-ডিলার আছে। তাঁদের ধরা হয় না। ধরা হয়, যারা এক পুরিয়া গাঁজা খায় তাঁদের। জানি না পুলিশ মাসহারা পায় কি না।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফকির মফিজুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় সবাই আজ মুখ খুলেছে, মাদক নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ঝড় তুলেছে। তাতেই বোঝা যায় কী ভয়াবহ অবস্থা। তিনি আরো বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা মোড়ে মোড়ে টাঙ্গিয়ে দিলেও কি মাদক নির্মুল হবে ? যেখানে সরিষার ভিতরেই ভূত।
লোহাগড়া থানার এস আই কে এম জাফর আলী বলেন, ঢালাওভাবে অভিযোগ করা হলো। এ উপজেলায় বড় ডিলার নেই। ছোট ছোট ডিলার আছে। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মাদক নির্মুলে আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু কাছে মাদক না পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
সভাপতির বক্তৃতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সভায় উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম, নলদী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ পাখি, কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, লোহাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার নজরুল ইসলাম, লাহুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন, উপজেলার বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির ঝড়"