নিউজ ডেস্ক ॥ যশোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর আওতাধীন নড়াইলের লোহাগড়া পল্লী বিদ্যুতের লক্ষীপাশা জোনাল অফিসের হিসাব রক্ষক (ক্যাশিয়ার) রফিকুল ইসলাম’র বিরদ্ধে গ্রাহকদের বিদ্যুত বিলের টাকা আত্মসাতের প্রমান পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লোহাগড়া পৌর এলাকার লক্ষীপাশা গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর ছেলে মোক্তার হোসেন ক্ষুদ্র শিল্প (এলটি-সি১) যার হিসাব নং ৯৪০-১০৬১, নিজ নামীয় মিটার অফিস কতৃক বিদ্যূত পিলারে স্থাপন পূর্বক লক্ষীপাশা বাজারে বিগত ৯০ দশক থেকে ক্ষুদ্র শিল্প (লেদ) বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ ও নিয়মিত বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে আসছেন। মহামারি করোনায় সরকার ঘোষিত লকডাউনে দীর্ঘদিন কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। গত ৭ আগষ্ট শ্রাবণ ধারায় অঝোরে বৃষ্টির মধ্যে মোক্তার হোসেনের প্রতিনিধি ইনামুল মোল্যা সংবাদ পান তার দোকান (লেদ) ঘরের মিটার আগুন ধরে পুড়ে গেছে। বিষয়টি তিনি লক্ষীপাশা জোনাল অফিসকে অবহিত করেন। বিদ্যুত কতৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পোড়া মিটারটি খুলে পরিক্ষাগারে পাঠায়। অনা বৃষ্টিতে মিটারে পানি প্রবেশ করে আগুনের সুত্রপাত ঘটেছে বলে মিটার মেকানিক্যাল কাম সুপার ভাইজার বখতিয়ার রহমান প্রতিবেদন দেয়। এর প্রেক্ষিতে গ্রাহক গত ৮আগষ্ট পূনরায় সংযোগের জন্য আবেদন করেন। আবেদন নিরিক্ষা শেষে ২০২০ সালের আগষ্ট মাসের বকেয়া ১ হাজার ২’শ ৭৬ টাকা পরিশোধের জন্য গ্রাককে মৌখিক নির্দেশ দেন। গ্রাহক জানায় তিনি ওই মাসে বিদ্যুত বিল পরিশোধ করেছেন, কোন বকেয়া নাই। কিন্ত মানতে নারাজ বিদ্যূত কতৃপক্ষ। পরে গ্রাহক হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। বাড়ি গিয়ে তিনি বিদ্যুত অফিসে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ পরিশোধিত সীলমহরযুক্ত বিলের ওই কপি খুজে পান। বিলের কাগজ নিয়ে বিদ্যুত অফিসে গিয়ে কম্পিউটারে চেক করে দেখা যায় বিলের টাকা ক্যাশিয়ার রফিকুল ইসলাম গ্রহন করে সরকারী কোষাগারে জমা না করে আত্মসাত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে অফিসে বেশ হৈচৈ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অবশেষে এক বছর পর গত ৮ আগষ্ট ২০২১ তারিখে তিনি তড়িঘড়ি করে বিলটি কম্পিউটারে পোষ্টিং করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মিটারটি নষ্ট হলেও গ্রাহকে দিতে হয়েছে কড়া মাশুল। করোনাকালে গুনতে হয়েছে ৪৫৫৪ টাকা। সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও পূন:সংযোগ (ডিসিআরসি) ফি ৯’শ ২০ ও সকেট ৩ হাজার ৬’শ ৫৪ টাকা।
বিল পরিশোধ করতে আসা চরমল্লিকপুর গ্রামের মৃত জাদব শীল’র ছেলে কমেেলশ শীল ও আমাদা গ্রামের জিতু শেখের স্ত্রী এসেছেন একই সমষ্যা নিয়ে। বিল জমা দেওয়ার পরও চলতি বিলের সাথে পূর্ববর্তী মাসের জমা দেওয়া বিলের টাকা অর্ন্তভূক্ত। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রত্যেক মাসের বিল প্রত্যেক মাসে জমা দিলিও প্রায় মাসের বিলি দেহা (দেখা) যায় আগের মাসেরডা যোক (যোগ) করে দেছে। অফিসে শুনতি গিলি কেউ আমাগে কথা শোনেনা। নিচতলা, দ্বিতীয়তলা আর তৃতীয়তলা করে করে হয়রানি করেন। পরে টাহা (টাকা) জমা দিয়ে আসতে হয়। নাম না বলার শর্তে ওই অফিসের একজন কর্মচারী জানান, ক্যাশিয়ার রফিকুল দীর্ঘদিন ধরে এহেন অপকর্ম করে আসছেন। মাসের মধ্যে অনেক বিলে এমন সমষ্যা নিয়ে গ্রাহক এসে তাদের সাথে বাকবিতন্ডা করেন। রফিকুল ইসলাম লক্ষীপাশা জোনাল অফিসে দুই বছর ক্যাশিয়ার পদে রয়েছেন। এখানে দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার বিলে টাকা জমা হয়। খুচরা টাকা নাই বলে গ্রাহকদের নিকট থেকে বিলপ্রতি এক থেকে নয় টাকা পর্যন্ত আদায় ও খারাপ ব্যাবহার করে থাকেন। খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, রফিকুল ইসলামের পূর্বের কর্মস্থল নড়াইল সদর উপজেলার তালতলা জোনালে। সেখানেও তিনি ৪-৫ বছর একই পদে ছিলেন। বিস্তর অনিয়ম করেছেন বলে ওই এলাকায় কথিত রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার রফিকুল ইসলাম টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার ভূল হয়েছে, টাকা জমা করে দিয়েছি।
লক্ষীপাশা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) এটিএম তারিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লোহাগড়ায় বিদ্যুত গ্রাহকের বিলের টাকা আত্মসাত

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় বিদ্যুত গ্রাহকের বিলের টাকা আত্মসাত"