শিরোনাম

লোহাগড়ায় বিদ্যুত স্পৃষ্ঠে স্কুল ছাত্র ইফাতের করুন পরিনতি ! দায়ী কে?

লোহাগড়ায় বিদ্যুত স্পৃষ্ঠে স্কুল ছাত্র ইফাতের করুন পরিনতি ! দায়ী কে?

নিউজ ডেস্ক॥ নড়াইলের লোহাগড়া পৌর শহরের কুন্দশি চৌরাস্তা সংলগ্ন মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে বিদ্যুত স্পৃষ্ঠে ইফাত হাওলাদার নামে এক স্কুল ছাত্রের সমস্ত শরির বিদ্যুতের আগুনে ঝলসে গেছে। আহত ইফাত লোহাগড়া পৌরসভার মশাঘুনি গ্রামের মটর শ্রমিক মফিজ হাওলাদারের ছেলে ও লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র।

জানা গেছে, উপজেলার মশাঘুনি গ্রামের মটর শ্রমিক মফিজ হাওলাদারের ছেলে ও লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র ইফাত হাওলাদার (১২) গত ১৯ মার্চ বিকাল ৪ টার দিকে স্কুলের বন্ধু স্বাধীনের ভর্তিরত অসুস্থ বোনের খাবার দেওয়ার জন্য কুন্দশি চৌরাস্তায় অবস্থিত জাকির হোসেনের পরিচালনাধীন মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে যায়। ক্লিনিকটি লোহাগড়া পৌরসভার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত হলেও ইমারত আইন লংঘন করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে অপরিকল্পিত ভাবে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সংযোগ তারের ৩ফুট নিচে নির্মাণ করা হয়েছে।

ইফাত খেলার ছলে নির্মানাধীন ভবনের তৃতীয় তলার কক্ষে প্রবেশ করলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। পরে মুমুর্ষ অবস্থায় ইফাতকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তৎক্ষনাত যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। যশোর হাসপাতালে ইফাতের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়। বার্ণ ইউনিটের আইসিইউতে ১১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর, অবস্থার আরও অবনতি হয়ে দু’পায়ে ও মাথার মাংস পেশি পচে অসংখ্য পোকার সৃষ্ঠি হয়। ইফাতের পরিবার ঢাকাতে চিকিৎসার ব্যায়ভার নির্বাহ করতে না পেরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদ্বয়ের বোর্ড সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইফাতের দু’টি পা কেটে বিচ্ছিন্ন এবং পঁচে যাওয়া মাথার চামড়া অপসারন করেন।

এ ছাড়াও চিকিৎসক জানান ইফাতের শ্বাসনালি ও ব্রেন মারাত্মক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে । যার চিকিৎসা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না থাকায় ইফাতকে দেশের বাহিরে পাঠানোর পরামর্শ দেন। ইফাত পা দু’টি হারিয়ে শ্বাসনালি ও ব্রেন সমষ্যা নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

ইফাতের পরিবার চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত থাকায় ঘটনার ১৮দিন পর নির্মমতার প্রতিকার চেয়ে গত ৭এপ্রিল ইফাতের খালু আবুল বাশার বাদী হয়ে অভিযুক্ত ভবন মালিক মোঃ লুৎফুল করিম কচি ও ক্লিনিক মালিক জাকির হোসেনসহ অজ্ঞাত লোকের নাম উল্লেখ্য করে লোহাগড়া থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন, এবং অভিযোগের অনুলিপি নড়াইল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেনারেল ম্যানেজার পিবিএস-২ সহ সকল দপ্তরে প্রেরন করেন। ইতিপূর্বে ওই ভবনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে একজন মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে।

ভবন নির্মানের প্রধান শ্রমিক মোঃ আলম শরীফ বলেন, প্রায় ৩বছর আগে অধিক পারিশ্রমিক পাওয়ার আশায় শ্রমিকদের জিবনকে বিপদগ্রস্থ করে ভবন নির্মান করা হয়েছে। পৌরসভার অনুমতি নিয়েছেন কিনা তিনি জানেন না ।
ভবন মালিক লুৎফুল করিম কচির নিকট ৩৩ কেভি বিদ্যুতের তারের নিচে ভবন নির্মানে বিদ্যুত ও পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নাই।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শফিউল ইসলাম বলেন, আমার স্বরন নাই তিনি অনুমতি নিয়েছেন কিনা! তবে কাগজপত্র দেখে বলা যেতে পারে। নাম না বলার শর্তে পৌরসভার একজন দায়ীত্বশীল ব্যাক্তি বলেন, ওই ভবনটি ২০১৪ সালে নকশা ও অনুমতি ছাড়াই ক্ষমতার জোরে নির্মান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবন মালিক ওই বিদ্যুত স্পৃষ্ঠের ঘটনার কয়েক দিন পরেই আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পৌরসভার একজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে অনিয়ম তান্ত্রিক উপায়ে একটি নকশায় পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শফিউল ইসলামের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছেন! তবে পেয়েছেন কিনা তিনি জানেন না।
অপর সূত্রে জানা যায়,মোর্শেদা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের সত্বাধিকারী মোঃ জাকির হোসেন নড়াইলের সিভিল সার্জন ও লোহাগড়া হাসপাতালের কর্তা ব্যাক্তিদের মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে হাসপাতালের সামনে চেম্বার খুলে ভূয়া ডাঃ পদবী ব্যবহার করে দির্ঘ্যদিন ধরে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে আসছিলেন। খবর পেয়ে নড়াইলের ভ্রাম্যমান আদালত তাকে আটক করে নগদ ১লক্ষ টাকা জরিমানা ও মুচলেকা আদায় করেন। পরে সু-কৌশলে স্থান পরিবর্তন করে কর্তাব্যাক্তিদের অনুরুপ ম্যানেজ করে ক্লিনিকের পাশাপাশি নিয়মিত রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে নির্বিগ্নে প্রতারনা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এহেন প্রতারনা কাজে ডাঃ প্রবীর কুমার দে শ্যাম তাকে সহযোগীতা করছেন। ইফাতের এ ঘটনায় লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়সহ লোহাগড়ার শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক,শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও সচেতন মহল ইফাতের করুন পরিনতি এবং ভবিষ্যতে আর কোন ইফাতের এমন পরিনতি না হয় সে জন্য ভবন মালিক লুৎফুল করিম কচি ও ক্লিনিক মালিক জাকির হোসেন’র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তীর জোর দাবী জানান।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় বিদ্যুত স্পৃষ্ঠে স্কুল ছাত্র ইফাতের করুন পরিনতি ! দায়ী কে?"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*