নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়ায় এক শিক্ষককে ৫ লাখ টাকার চাঁদার দাবীতে গাছে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা । এ সময় তারা নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং বাকী সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেক ও ষ্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। বেশী বাড়াবাড়ি করলে দেশ ছাড়ার ও হত্যার ভয় দেয়। আহত শিক্ষক ওই সন্ত্রাসীদের ভয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে সাহস পাচ্ছে না । তবে তাকে স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার উবায়দুর রহমান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে ওই পরিবারের লোকদের। ভয়ে ওই শিক্ষকের পরিবার মামলা করতে পারছে না। গত ২ অক্টোবর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে,উপজেলার মরিচপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাঝিপাড়া পূজামন্ডব কমিটির সভাপতি মনি কুমার বিশ্বাস গত ২ অক্টোবর রাতে লাহুড়িয়া বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে একই গ্রামের রোস্তম মিয়ার ছেলে মনিরুল ইসলাম,আনিচুর রহমান,পল্লি চিকিৎসক আমিনুর রহমান, লাহুড়িয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আকবর হোসেন ও তার ভাই আমিনুর ওই শিক্ষককে ধরে নিয়ে মেহগিনি গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করে এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। খবর পেয়ে মনি কুমারকে বাচাতে তার স্ত্রী শিক্ষিকা বাসনা রানী ,প্রতিবেশী ত্রিনাথ ও পরিমল স্বর্ণকার নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং সাড়ে ৪ লাখ টাকার একটি চেক ও একটি ফাঁকা ষ্ট্যাম্প দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। বাকী সাড়ে ৪ লাখ টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে না পারলে এবং এ নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে হত্যা ও দেশ ছাড়ার হুমকিও দেয় ওই সন্ত্রাসীরা।
বাসনা রানী ও প্রতিবেশী গৌরাঙ্গ বিশ্বাস জানান, মাঝিপাড়া গ্রামের রোস্তম মিয়ার ছেলে মনিরুল ইসলাম,আনিচুর রহমান ,পল্লি চিকিৎসক আমিনুর রহমান,ডহরপাড়া গ্রামের আকবর মেম্বর ও তার ভাই আমিনুর গং দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন,আমরা কোটিপতি হয়েছি। আমাদের মোটা অংকের টাকা চাঁদা দিতে হবে। পরিকল্পিতভাবে তারা আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে গত ২ অক্টোবর রাতে লাহুড়িয়া বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে ধরে নিয়ে মনিরুল’র বাড়ী পাশে মেহগনি গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। খবর পেয়ে আমি প্রতিবেশী দুইজনকে সাথে নিয়ে বাড়ী থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেক তাদের দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনি।ওই সন্ত্রাসীদের ভয়ে আহত স্বামীকে হাসপাতালে নিতে ব্যর্থ হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ীতে রাখা হয়েছে। তাদের হুমকিতে মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না,্ মামলা করলে হত্যা এবং দেশ ছাড়ার ভয় দিচ্ছে তারা। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম,টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, গ্রাম্য শালিশ বৈঠকে টাকার লেন দেন একটু হয়ে থাকে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডহরপাড়া গ্রামের নবম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ইভটিজিং করার অভিযোগ রয়েছে । লাহুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন বলেন, ঘটনা শুনেছেন তবে কোন অভিযোগ পাননি তিনি । লোহাগড়া উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি প্রবীর কুমার কুন্ডু জানান,শিক্ষককে মারপিট এবং চাঁদার বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান তিনি । লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করতঃ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Be the first to comment on "লোহাগড়ায় সংখ্যালঘু শিক্ষককে গাছে বেঁধে মারপিট"