নিউজ ডেস্ক ॥ নড়াইলের লোহাগড়ায় পানির মোটর চুরির অপবাদে রকি মোল্যা (২৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিককে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে দিনভর এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসি রকিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সন্ধা সোয়া ছয়টায় লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পানি উঠানো মোটর গত সোমবার রাতে চুরি হয়। এ ঘটনায় পার্শ্ববর্তী কলাগাছি গ্রামের আতিয়ার মোল্যার ছেলে রকি মোল্যা ও চালিঘাট গ্রামের হাফিজার শেখ’র ছেলে রসুল শেখকে সন্দেহ করেন চালিঘাট গ্রামের ছাইফার রহমানের ছেলে কাশিপুর ইউপির সাবেক সদস্য শরীফুল ইসলাম ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ শাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজন। রকি মোল্যা রাজমিস্ত্রি ও ডেকোরেটরের কাজ এবং রসুল এলাকায় ছোটখাটো চুরি করে থাকেন বলে জানায় স্থানীয়রা। রসুল এলাকার চিহ্নিত চোর হলেও শরীফুল মেম্বারের দোসর হওয়ায় তাকে মুক্ত করে স্থলাভিক্ত করেন, নিরীহ রকি মোল্যাকে। ওই দিন রকির নির্মাণ কাজ না থাকায় সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে কাজের জন্য যায় নিউ স্মার্ট ডেকোরেটরে। সেখানে কাজ করা অবস্থায় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এলাকায় একাধিক হত্যা, মারামারী ও মাদকসহ অন্তত এক ডজন মামলার আসামী শরীফুল ইসলাম এবং ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহশীন আলম রকিকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় চালিঘাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আটকিয়ে রাখে। পরে হাত-পা বেধেঁ মধ্যযুগীয় কায়দায় দিনভর মারপিট করেন শরীফুল ইসলামসহ তার লোকজন। ছেলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রকির মা ফিরোজা বেগম। তিনি ছেলের এহেন অবস্থা দেখে তিনিও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে রকি অচেতন হয়ে পড়লে স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে রকিকে চিকিৎসা করান প্রধান শিক্ষক শেখ শাহাবুদ্দিন। রকির জ্ঞান না ফেরায় অবস্থা বেগতিক দেখে সটকে পড়েন প্রধান শিক্ষকসহ শরীফুল পক্ষীয় লোকজন। পরে স্থানীয় লোকজন রকিকে উদ্ধার করে লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। সংবাদ পেয়ে লোহাগড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমএম আরাফাত হোসেন ও লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোকাররম হোসেন এবং স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীরা ছুটে যান হাসপাতালে। রকি অচেতন থাকায় তার জবানবদ্ধি নিতে ব্যর্থ হন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ গনমাধ্যমকর্মীরা। চিকিৎসার একদিন পর জ্ঞান ফিরে রকি সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। এ ঘটনায় বুধবার (১৮সেপ্টেম্বর) দুপুরে রকির ভাই ফারুক মোল্যা বাদী হয়ে ৭জনের নাম উল্লেখ করে লোহাগড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ শাহাবুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন না। পরে এসে আহত রকিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। এ দিকে ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। রকির মা ফিরোজা বেগম বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। চুরির সঙ্গে জড়িত নয়, সে লক্ষীপাশা কাজ করে। আমার নির্দোষ ছেলেকে শরীফুল ধরে এনে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেছে। আমি শরীফুলের হাত-পা ধরি, চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে মারতে নিষেধ করি। তারপরও মারতে থাকে। আমার ছেলে বারবার বলতে থাকে, মা আমি চুরি করিনি। তাও তারা মারপিট থামায় না। এক পর্যায়ে ছেলে অচেতন হয়ে নাক-মুখ দিয়ে গেজলা বের হতে থাকলে তখন তারা মারপিট থামিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য ভ্যানে ওঠায় দেয়। আমি এর বিচার চাই।
নোয়াগ্রাম ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, রকি মোল্যা অবিবাহিত এবং তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার স্বভাব চরিত্র ভাল। সে রাজমিস্ত্রি ও ডেকোরেটরের কাজ করে তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সংসারে থাকে।
লোহাগড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ওই রোগীর মাথা, বুক ও হাত ভাঙ্গাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে শংকামুক্ত নয়।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোকাররম হোসেন এজাহার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
লোহাগড়ায় হাত-পা বেঁধে নির্মাণ শ্রমিককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

Be the first to comment on "লোহাগড়ায় হাত-পা বেঁধে নির্মাণ শ্রমিককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন"