শিরোনাম

অবশেষে পরিবারের কাছে নাজিমের মরদেহ হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা টানাপড়েন শেষে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ভাতিজা জাহিদুল ইসলাম সুমন নাজিমের মরদেহ গ্রহণ করেন। এর আগে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ মর্গে রাখা-না রাখা ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে নানা টানাপড়েন চলে বুধবার রাত থেকেই।

সূত্রাপুর থানা পুলিশ জানায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্র ও গুলিবিদ্ধ হন নাজিমুদ্দিন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিডফোর্ড) নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর হাসপাতালেই ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হয়। তবে মরদেহ হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয় বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিডফোর্ড) মর্গের সহকারী শ্যামল জানান, হাসপাতালের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় মরদেহ মর্গে রাখা সম্ভব নয়। সন্ধ্যার আগেই মরদেহ নিয়ে যেতে হবে। পরে অনেক টানাপড়েন শেষে ভাতিজার কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ।

সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তপন ‍কুমার সাহা বলেন, নিহত নাজিমুদ্দিনের মরদেহ গ্রহণ করার মতো কেউ নেই ঢাকায়। পরিবারের সদস্যরা লন্ডনে থাকেন। হাসপাতাল মর্গের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় মরদেহ সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে সন্ধ্যার পর ভাতিজা জাহিদুল ইসলাম সুমন মরদেহ গ্রহণ করেন।

ওসি জানান, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি নাজিমুদ্দিনরা পাঁচ ভাই। বাবা ও বড় ভাই মারা গেছেন। বাকি তিন ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকায়।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জাহিদুল ইসলাম সুমন জানান, চাচা মারা যাওয়ার খবর জানতে পেরে রাতেই সিলেট থেকে আমি ঢাকায় আসি। কিন্তু আমি তো মরদেহ গ্রহণ করার কেউ না। চাচার নিজের ভাইয়েরা না আসায় আমি মরদেহ গ্রহণ করেছি। মরদেহ সিলেট নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, মাত্র দুই মাস আগে ঢাকায় এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) আইন বিষয়ে সান্ধ্যকালীন এলএলএম কোর্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন নাজিমুদ্দিন। তার জন্ম ১৯৯০ সালে। এর আগে নাজিম সিলেটে লেখাপড়া করতেন। তবে জবিতে ভর্তি হওয়ার পর তিনি রাজধানীর ঋষিকেশ দাস লেনের একটি মেসে থাকতেন।

নিহত নাজিম অনলাইনে ধর্মান্ধতার বিরোধিতা ছাড়াও রাজনৈতিক-সামাজিক ইস্যুতেও সোচ্চার ছিলেন। সোচ্চার ছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও। এমনকি যৌক্তিকতার জায়গা থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা করতেন তিনি।

গত ২ এপ্রিল এক পোস্টে নাজিম আওয়ামী ওলামা লীগ নিয়ে লেখেন, ‘আওয়ামী ওলামা লীগ আর বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দুই বিপরীত মেরুর দুই বাসিন্দা। ওলামা লীগ কখনোই বাহাত্তরের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চায়নি এবং চাইবে না।’

এছাড়াও নিহত হওয়ার আগে এক মাওলানার নারীবিদ্বেষী ওয়াজের অভিযোগ সম্বলিত ভিডিও শেয়ার করে তার সমালোচনাও করেছিলেন নাজিম। হত্যাকাণ্ডের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগে মশাল মিছিল ও সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ।

সেখানে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা ও রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে আড়াল করতেই মুক্তমনা ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়েছে।

basic-bank

Be the first to comment on "অবশেষে পরিবারের কাছে নাজিমের মরদেহ হস্তান্তর"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*