শিরোনাম

আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ‘গভীর অসন্তুষ্ট’ সুপ্রিম কোর্ট

নিউজ ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টকে না জানিয়ে নিম্ন আদালতের ১২ জন বিচারককে একটি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি ‘গভীর অসন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই মনোনয়ন বাতিল করেছেন প্রধান বিচারপতি।

বিচার বিভাগকে না জানিয়ে ঢাকায় বিচারকাজে নিযুক্ত বিচার বিভাগের ওই কর্মকর্তাদের কেন মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তার লিখিত ব্যাখ্যাও তলব করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।

প্রসঙ্গত, মতবিনিময় সভাটির আয়োজক ছিল আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ। বিচারকদের মনোনয়ন দিয়েছিল মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ।

৬ এপ্রিল শিশু আইন-২০১৩ এর ওপর অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় নিম্ন আদালতের ১২ বিচারক মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ৭ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়ের ওই মনোনয়ন বাতিল করে ব্যাখ্যা চান সুপ্রিম কোর্ট। ঢাকায় গত ৯ এপ্রিল উল্লিখিত অভিজ্ঞতা বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সভাটি বাতিল করা হয়।

ঢাকার বিভিন্ন আদালতে সার্বক্ষণিক বিচারকাজে নিয়োজিত ১২ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের বাস্তবায়নাধীন পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লেজিসলেটিভ রিফর্ম ফর চিলড্রেন প্রজেক্ট ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে উল্লিখিত অভিজ্ঞতা বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশ

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার (বিচার) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে বিচারকদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

ওই আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে গভীর অসন্তুষ্টি প্রকাশসহ অবিলম্বে সূত্রস্থ স্মারকে সার্বক্ষণিক বিচারকাজে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রদত্ত মনোনয়ন বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন কর্তৃত্ববলে অনুরূপ আদেশ জারি করা হয়েছে সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা অত্র কোর্টে প্রেরণ করার জন্য বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

আইন সচিব বললেন
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক টেলিফোনে বলেন, ‘এর আগেও এভাবে অনেককে (বিচারককে) ডাকা (মনোনয়ন দেওয়া) হয়েছে। পাকিস্তান আমল থেকে এমন মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, এটা নতুন কিছু নয়।’

এরপর তিনি টেলিফোনে বিস্তারিত কথা না বলে সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করার জন্য বলেন। পরের দিন (২১ এপ্রিল) দেখা করতে গেলে এর আগে কীভাবে সার্বক্ষণিক বিচারকাজে নিযুক্ত বিচারকদের আইন মন্ত্রণালয় মনোনয়ন দিয়েছে তা জানান। কিন্তু সাক্ষাতে এ বিষয়ে প্রতিবেদনে ব্যবহারের জন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সুপ্রিম কোর্টের চাওয়া ব্যাখ্যা লিখিতভাবে দিয়েছেন কিনা— জানতে চাইলে আইন সচিব বলেন, ‘এখনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কিছু দিনের মধ্যেই দেব।’

এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেহেতু এখানে বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি বা তার স্টেশন পরিবর্তন করার বিষয় জড়িত নয়, তাই এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা এতদিন হয়নি। এখন উচ্চ আদালত কেন এমন ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তা বুঝতে পারছি না।’

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধঃস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার কথা বলা হয়েছে। নিম্ন আদালতের কর্মকর্তাদের কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরির বিষয়টি রাষ্ট্রপতির পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে সম্পাদন করে।
আইন মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তার দাবি, যেহেতু সংবিধানে নিম্ন আদালতের বিচারকদের তিনটি বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের কথা বলা হয়েছে, তাই এর বাইরের কোনো মনোনয়নে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ দরকার নেই।

এ সময় সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে আইন মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা পাকিস্তান আমল থেকে চলে আসা নিয়মের কথা উল্লেখ করেন।

সংবিধান যা বলে
সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধঃস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হইবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের আয়োজনে কোনো অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে মনোনীত করলে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিতে হবে। একে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।’

basic-bank

Be the first to comment on "আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ‘গভীর অসন্তুষ্ট’ সুপ্রিম কোর্ট"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*