শিরোনাম

এক সপ্তাহেও গঠিত হয়নি ১৪ দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি

নিউজ ডেস্ক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ঘোষিত সারা দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে কমিটি এক সপ্তাহেও গঠিত হয়। গুলশানের হোলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর সাড়া দেশের জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় জোটটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দুই ঘটনাস্থল খোদ রাজধানী ও কিশোরগঞ্জসহ অধিকাংশ জেলায় এখনও গঠিত হয়নি প্রতিরোধ কমিটি। ১৫ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এই কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জেলায় এখনও কমিটি গঠিত হয়নি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে ১৫ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয় দলটি।

তৃণমূলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা এবং মহানগরগুলোতে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কমিটির অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গি তৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এ কমিটি গঠন করতে হবে।’

কেন্দ্রের নির্দেশ থাকলেও এখন পর্যন্ত কমিটি গঠন হয়নি খোদ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনও কমিটি গঠন হয়নি। ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের পরে নগর কমিটি গঠন করবে। তবে সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ অসুস্থ থাকার কারণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি গঠন আটকে আছে।

সভাপতি আবুল হাসনাত বেশ কয়েকদিন ধরেই চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক অবস্থান করছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তারা দুইজন সুস্থ হলেই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। শনিবারের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি জমা দেয়া হবে। কমিটির তালিকা জমা দেয়ার পরেই আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবো।

একই অবস্থা বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও। জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশ থাকলেও চট্টগ্রামে তা এখনও গঠন করতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ। অসুস্থ অবস্থায় কিছু সময় ঘরে এবং চিকিৎসার জন্য দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ফলে কমিটি গঠনে ভাটার টান চলছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, কমিটি গঠনের কাজ একটু ধীরে চলছে বৈ কি। তবে কাজ চলছে। দেখে শুনে কমিটি গঠনের কাজও সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় নির্দেশের পরেই কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হলেও তা কখন গঠিত হবে এ বিষয়ে কোনো খবর নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কিশোরগঞ্জ জেলার নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা সাকাউদ্দিন আহাম্মাদ রাজন জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ পাওয়ার পর পরেই কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠনের কাজ চলমান রয়েছে।

এ দিকে যে সকল জেলায় এখনও কমিটি গঠন হয়নি সেগুলো হলো- রংপুর মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, নাটোর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম,পঞ্চগড়, শেরপুর, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ,পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল প্রমুখ।

তবে জেলা কমিটি না হলেও প্রতিদিনই দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করছেন এই জেলার নেতাকর্মীরা।

এ জেলাসমূহের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন না হলেও তারা এর একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা গঠন করতে পারবেন বলেও জানান তারা।

১২০টি পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে রাজশাহী মহানগরের কমিটি গঠন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।

তিনি জানান, এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। আর প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তবে এখনও গঠিত হয়নি রাজশাহী জেলার কমিটি।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানিয়েছেন, আমাদের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে শনিবারের মধ্যে তা শেষ করতে পারবো।

মাদারীপুর ও সাতক্ষীরা জেলায় ১০১ সদস্য বিশিষ্ট সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন হয়েছে। এ কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস ও সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বাবর আলী মীর। জেলার চার সংসদ সদস্যকে এ কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়াও এ কমিটিতে রাখা হয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, ১৪ দলীয় জোটের নেতা, সমাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের।

অন্যদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক থেকে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে একটা কমিটি গঠন হয়েছে। এছাড়াও আমাদের সকল কমিটি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের কমিটি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে।

সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল হককে আহবায়ক ও অধ্যক্ষ আশেক-ই- এলাহীকে সদস্য সচিব ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মাগুরায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডুকে সদস্য সচিব করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে ১০৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)-কে সদস্য সচিব করে ১০৮ সদস্যসের এই কমিটি গঠন হয়।

জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সক্রিয় সব সদস্যরা এ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। ইতিমধ্য সমাবেশ, র‌্যালি করে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষদের সচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, কয়টি জেলায় কমিটি গঠন হয়েছে এমনটা এখনও জানি না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারবো।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "এক সপ্তাহেও গঠিত হয়নি ১৪ দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*