নিউজ ডেস্ক : মাসের কয়েকটি দিন মাথা ঝিমঝিম, অবসাদ-ক্লান্তি। মেজাজ খারাপ। বিষণ্নতা। ভালো লাগে না কিছু। কমবেশি অনেক নারীই পড়েন এই পরিস্থিতিতে। এ নিয়ে লজ্জা, বিব্রত হওয়া বা অপরাধবোধের কিছু নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নাম প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম।
সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার ৫ থেকে ১০ দিন আগে থেকে শুরু হয় উপসর্গগুলো। শুরু হওয়ার পর আবার কমতে থাকে।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের সঠিক কারণটি অজানা। মূলত এর জন্য হরমোনের ওঠানামাকেই দায়ী করা হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা মাসিকের আগে আগে বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাবেই উদ্বেগ, মেজাজের তারতম্য আর খিটখিটে ভাব বাড়ে।
এই উপসর্গগুলো কেমন? ৮০ শতাংশের উপসর্গ মোটামুটি সহ্যের মধ্যেই থাকে। দৈনন্দিন জীবনকে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে না। ২০ থেকে ৩২ শতাংশ নারীর মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার উপসর্গ হয়। ফলে তাঁদের পক্ষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা কঠিন হয়। আর ৩ থেকে ৮ শতাংশ নারীর সমস্যা আরও তীব্রতর হতে পারে। একে তখন বলে প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার বা পিএমডিডি। তাঁদের অনিদ্রা (ইনসমনিয়া), তীব্র বিষাদগ্রস্ততা, এমনকি আত্মহত্যার ইচ্ছেও জাগতে পারে।
গড়পড়তা উপসর্গ: পেটব্যথা, পেট ফাঁপা, মাথাব্যথা, পেশি কামড়ানো, পায়ে ব্যথা, আলো ও শব্দের প্রতি অতি সংবেদনশীলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, খাবার তীব্র ইচ্ছে (বিশেষ করে মিষ্টি খাবার), স্তনে ব্যথা, অবসাদ ও বিষণ্নতা, মেজাজের ওঠানামা ইত্যাদি। এ ছাড়া ব্রণ ও মাইগ্রেনের উপসর্গ এই সময়ে বেড়ে যেতে পারে।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম কষ্ট দেয় বটে, তবে এ নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যত বেশি উদ্বিগ্ন হবেন, উপসর্গ তত বাড়বে। কিছু অভ্যাস চর্চা করে এ থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন।
১. মাসিকের প্রথম দিনকে ধরে ২৮ দিনের চক্রে ১৪ দিনের মাথায় ওভুলেশন হয়ে থাকে। উপসর্গগুলো শুরু হয় এর ঠিক পরপর। ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে তারিখ মিলিয়ে দেখুন, প্রতিবার এই সময়েই সমস্যা শুরু হয় কি না। তাহলে বুঝবেন উপসর্গগুলো কেন হচ্ছে। মনে রাখবেন, আইবিএস, রক্তশূন্যতা, থাইরয়েডের সমস্যার কারণেও এসব উপসর্গ হতে পারে। প্রয়োজনে এই রোগগুলো নির্ণয় করতে পরীক্ষা করে নিন।
২. এই সময়টাতে প্রচুর পানি ও তরল পান করতে হবে। পানিশূন্যতার সঙ্গে পেটের অস্বস্তি ভাবটাও দূর হবে। কারও এ সময় ভারী খাবারে পেট ফাঁপতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খান। তাজা শাকসবজি ও ফলমূল, দুধ, টকদই ইত্যাদি। অতিরিক্ত চা-কফি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো, বেশি লবণ বা চিনিযুক্ত খাবারও না। এতে অস্থিরতা আরও বাড়ে।
৩. অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতে কয়েকটি দিন ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে আয়রনও খেতে পারেন।
৪. রাত জাগবেন না। অন্তত আট ঘণ্টা ভালো ঘুম চাই। যথেষ্ট বিশ্রাম একটু প্রশান্তি আনবে।
৫. মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। বই পড়ুন বা ভালো গানবাজনা শুনুন। হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়ামও করা যায়।
৬. শরীর বা মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যায়। কোমরে ব্যথা হলে একটু গরম সেঁক নিতে পারেন।
৭. যাঁদের উপসর্গ তীব্র হয়, তাঁরা ‘বিহেভিয়ার থেরাপি’ নিতে পারেন বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের কারণে অনেকে খুবই বিব্রত হন। অন্যের সঙ্গে উল্টোপাল্টা আচরণ করেন। পরে অপরাধবোধে ভোগেন। মনে রাখবেন, হরমোনের ওঠানামার জন্য আপনি কখনোই দায়ী নন। তবে নিজের আবেগ, মেজাজ ও মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। আর সেটা নিশ্চয়ই পারবেন।
Be the first to comment on "ওই দিনগুলোর আগে কেন এমন হয়?"