শিরোনাম

কঠিন শর্তেই নতুন সহযোগীদের দিকে ঝুঁকছে সরকার

নিউজ ডেস্ক: বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক কিংবা জাপানের মতো দাতা দেশ ও সংস্থার বাইরে নতুন সহযোগী সংস্থার দিকে ঝুঁকছে সরকার। চলতি অর্থবছরে নতুন দাতা সহযোগীদের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ নেয়া হচ্ছে। বর্তমান বিনিময় হারে যা দাঁড়াবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই ঋণের সুদের হার ও শর্ত বেশ কঠিন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যম আয়ের অর্থনৈতিক দেশে পৌঁছাতে হলে জাতীয় উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য নতুন দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নতুন উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে বড় অংকের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমেধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ঋণ প্রদানে প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চীন সরকার থেকে ৪৪১ কোটি ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া ৩৯ কোটি ডলার এবং এআইআইবির কাছ থেকে সাড়ে ১৬ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, উন্নয়নে সরকার এখন পশ্চিমের পাশাপাশি দক্ষিণমুখী হচ্ছে। আগে পশ্চিমা দাতা সংস্থা ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। এখন অন্যান্য দাতা সংস্থাও রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সবসময় সহজ শর্তের ঋণ নাও পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চড়া সুদের ঋণ নেয়াটা দোষের কিছু নয়। মূল কথা হচ্ছে ঋণের ব্যবহার।

জানা গেছে, নতুন দাতাদের এসব ঋণের সুদের হার দেড় শতাংশের কাছাকাছি হলেও কমিটমেন্ট ফি, ম্যানেজমেন্ট ফি এবং অন্যান্য ফি মিলে ঋণের বিপরীতে প্রায় ৫ শতাংশ চার্জ পরিশোধ করতে হবে। আবার ঋণ পরিশোধের সময়ও জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং বিশ্বব্যাংকের তুলনায় অর্ধেক। গ্রেস পিরিয়ডও তুলনামূলকভাবে খুব কম। ঋণের বড় অংশের অর্থ দিয়ে ঋণদাতা সংস্থার মনোনীত প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার শর্তও রয়েছে। ফলে এসব বিবেচনায় চীনের ঋণ হবে কঠিন শর্তের।

বিশ্বব্যাংক, জাইকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ৩৫ শতাংশের বেশি ‘গ্রান্ট এলিমেন্ট’ থাকে। আলোচ্য ৫০০ কোটি ডলার ঋণের গ্রান্ট এলিমেন্ট ৩০ শতাংশেরও কম। এর রেয়াত চার থেকে পাঁচ বছর। আবার ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করার শর্ত দেয়া হচ্ছে।

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, সব প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক ও জাইকার মতো নমনীয় শর্তে ঋণ পাওয়া যায় না। যেহেতু উন্নয়ন চাহিদা বাড়ছে সেহেতু কিছু ঋণ কঠিন শর্তে নিতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ১৭৫ কোটি ডলারের মধ্যে ১৩৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার দেয়ার প্রস্তাব করেছে চীন। জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত দ্বৈত রেললাইন স্থাপন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মিটার গেজ রেল লাইনের পাশাপাশি সমান্তরাল আরেকটি ব্রডগেজ লাইনে উন্নীতকরণে ২৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার ঋণ প্রস্তাব রয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিমানবন্দর থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত লাগেজ ভ্যান শীর্ষক একটি প্রকল্প রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ঋণ পাওয়া যাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে টেলিযোগাযোগ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ নেবে সরকার।

সাবেক সচিব ও ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের সাবেক প্রধান আরাস্তু খান বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং সে লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। এটি করতে হলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার তা শুধু সহজ শর্তের ঋণের ওপর নির্ভর করলে হবে না। মধ্যম আয়ের অর্থনীতির লক্ষ্য পূরণ করতেই বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে কঠিন শর্তে ঋণ নেয়া হচ্ছে। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "কঠিন শর্তেই নতুন সহযোগীদের দিকে ঝুঁকছে সরকার"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*