শিরোনাম

‘কামসূত্র’ কি বাতিল আজকের দিনে?

নিউজ ডেস্ক : একথা উঠতেই পারে, কতটা প্রাসঙ্গিক এই গ্রন্থ বর্তমান সমাজে? দেড় হাজার বছর অতিক্রম করার পরে ভারতীয় সমাজ যে চেহারা ও চরিত্রে পর্যবসিত, তাতে ‘কাম’ কী, তা-ই ধারণার অতীত।

কামসূত্র-প্রণেতা বাৎস্যায়নের সময়কালকে ঐতিহাসিকরা খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক বলে চিহ্নিত করেছেন। গ্রন্থটি খুঁটিয়ে পড়লে বোঝা যায়, এই বইতে বাৎস্যায়ন তাঁর পূর্ববর্তী ঋষিদের মতামতকে সংকলিত করেই নিজের মত ব্যক্ত করেছিলেন। কী লেখা ছিল সেই বইতে? একথা আজ অনেকেই জানেন, কামসূত্র আর যা-ই হোক, কোনও অর্থেই পর্নোগ্রাফি নয়। ভারতীয় আধ্যাত্ম্যে বর্ণিত চারটি বর্গের অন্যতম কাম সম্পর্কে এই গ্রন্থ সম্যক জ্ঞান দান করে। এই গ্রন্থ কোনও রগরগে যৌনবর্ণনা নেই, রয়েছে জীবনযাপন প্রণালী সম্পর্কে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি গঠনের পরামর্শ।

কিন্তু আজকের দিনে একথা উঠতেই পারে, কতটা প্রাসঙ্গিক এই গ্রন্থ বর্তমান সমাজে? দেড় হাজার বছর অতিক্রম করার পরে ভারতীয় সমাজ যে চেহারা ও চরিত্রে পর্যবসিত, তাতে ‘কাম’ কী, তা-ই ধারণার অতীত। ‘কাম’-কে যৌনতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে কামসূত্র-র পাঠ সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজে কি বাৎস্যায়ন আদৌ প্রাসঙ্গিক, এই প্রশ্নে না গিয়ে ‘কামসূত্র’ কিন্তু বার বার উঠে আসছে সিনেমায়। কী দেখানো হচ্ছে সেখানে? সেটা কি আদৌ বাৎস্যায়নের মতকে প্রতিষ্ঠা দেয়? জাগ মুন্দ্রার ‘টেলস ফ্রম কামসূত্র’, মীরা নায়ারের ‘কামসূত্র: আ টেল অফ লাভ’ থেকে সাম্প্রতিক ‘কামসূত্র থ্রিডি’ কাকে উদ্দেশ্য করে রচিত? আধুনিক সমাজের কাছে কস্টিউম ড্রামায় ইরোটিকা পরিবেশন ছাড়া আর কী উদ্দেশ্য রয়েছে এই সব ছবির?

সবার উপরে, ‘কামসূত্র’ গ্রন্থটিকে ক’জন আজ অভিনিবেশ-সহ পাঠ করতে পারেন? এর উত্তরও ধোঁয়াটে। কোথায় বিয়োজিত হয় কামসূত্র আজকের জীবন থেকে, তার খোঁজ নেওয়া যেতে পারে কয়েকটি উদাহরণ থেকে—

• গোটা গ্রন্থেই নারীদের উপরে আরোপিত রয়েছে বিভিন্ন প্রকার নিরীক্ষার প্রস্তাব। প্রসাধন থেকে শুরু করে মেধাচর্চা— পুরোটাই ধাবিত হয়েছে নিজেকে সঙ্গমের উপযোগী করে তোলার জন্য। আজকের লিঙ্গসমতার যুগে এই ধারণা কতটা প্রাসঙ্গিক?

• গ্রন্থে বর্ণিত পারিবারিক সম্পর্কসূত্রগুলির সঙ্গে আজকের ভারতের সহস্র যোজন ফারাক। যেমন, গ্রন্থে বলা হয়েছে, শ্বশুর কখনওই পিতার স্থান অধিকার করতে পারেন না। অথচ, আজকের ভারতীয় মেয়েদের অনেকই ফাদার ফিগার-কে খুঁজে পান শ্বশুরের মধ্যে। তৈরি হয় সহজ-সুন্দর সম্পর্কও।

• নারী ও পুরুষের মধ্যে কামগন্ধহীন বন্ধুত্ব সেকালে সম্ভব ছিল না। গ্রন্থও সেই অনুযায়ীই মত প্রকাশ করেছে। আজ তা অনেকের কাছেই হাস্যকর ঠেকতে পারে।

• নারীর শিক্ষাকেও এই গ্রন্থ দেখেছে একান্তভাবে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিতে। তাকে ‘সুন্দরী’, ‘মোহময়ী’, ‘আকর্ষণীয়া’ করে তোলাটাই যেন শিক্ষার উদ্দেশ্য। আজকের মানবীচেতনাবাদীরা ক্ষেপে যাবেন, সন্দেহ নেই।

• সর্বোপরি, গ্রন্থে অনেকবারই বলা হয়েছে, নারী আধ্যাত্মিক মার্গে খুব উচ্চতায় উঠতে পারেন না। আবহমান ভারতে অসংখ্য নারী আধ্যাত্মাবদান রেখেছেন। সেই দিক থেকে দেখলে, এই গ্রন্থ আজ নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "‘কামসূত্র’ কি বাতিল আজকের দিনে?"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*