নিউজ ডেস্ক॥ দেশে শিশু ও নারী পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা। ভারতের মুম্বাই, হায়দারাবাদ ও কলকাতা ভিত্তিক একটি নারী পাচারকারী চক্র বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। একই সাথে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পাচার করে দেয়া হচ্ছে অসহায় নারীদের। পুলিশি অভিযানের কারনে মাঝে মধ্যে পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িতরা ধরা পড়লেও হোতারা বরাবরই থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। লোহাগড়া উপজেলার কুমারডাঙ্গা গ্রামের জাফর শেখ’র মেয়ে হনুফা বেগমকে মিরাজ মোল্যা ভারতে বিক্রি করায় তার মাতা হাফিজা খাতুনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার (১৬মে) রাতে কালিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সংগীয় এসআই শিমুল কুমার দাসসহ একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে কালিয়া থানার পেড়লী গ্রামের মৃত বক্কার মোল্যার ছেলে আন্ত জেলার নারী পাচার কারী দলের অন্যতম প্রধান মিরাজ মোল্যাকে গ্রেফতার করেন। আটক মিরাজ মোল্যার বিরুদ্ধে ভারতে নারী পাচারসহ বিভিন্ন নারীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক বিক্রিসহ ডজন খানেক বিয়ের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ মোল্যার নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাচারকারী চক্রের অন্য সদস্য ও দালালদের মাধ্যমে নারী সংগ্রহ করে থাকেন। নারী প্রতি দালালদের দেয়া হয় ৫০ থেকে ১লক্ষ টাকা। পরে মিরাজ মোল্যা তার সুবিধা জনক সময়ে ওই নারীদের ভারতের মুম্বাই, হায়দারাবাদ ও কলকাতার বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লী, বার এবং আবাসিক হোটেলে ৩ থেকে ৪লক্ষ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। সেখানে নারীদের জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানো হয়। আবার কোনো কোনো নারীকে উচ্চ মূল্যে বিত্তশালীদের কাছে বিক্রি করা হয়ে থাকে। তবে উঠতি বয়সী এবং সুন্দরী নারীদের পাচারের টার্গেট করেন এই মিরাজ মোল্যা। ওই বয়সী নারীদের প্রথমে বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে উচ্চাভিলাষী জিবন যাপনের প্রলোভনের মাধ্যমে আকৃষ্ট করেন। পরে কৌশলে বিয়ে করেন। এ রকম প্রতারণরায় ফেলে অন্তত ১৫-২০টি বিয়ে করেছেন। পরে নববধুকে বিদেশ ভ্রমনের কথা বলে ভারত নিয়ে যায়। সেখানে কিছু দিন থাকার পর পূর্বপরিকল্পিত ছক মোতাবেক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দালালদের কাছে বিক্রি করে ভারতীয় অবৈধ মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে নতুন পরিকল্পনায় মত্ব হয় মিরাজ। চলন-বলন, উন্নত সুগন্ধি ও বেশভূষন বাহারী। নিত্য নতুন শার্ট-প্যান্টে চলেন বেশ ঠাঁটেবাটে। মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার আশংকায় আইনশৃংখলা ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে বেশ সখ্যতা রেখে চলেন।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৪ হাজার ২শ ২২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। পাচারকারীরা বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে নারী পাচার করে আসছে। তবে ভারতে যাওয়ার জন্য যশোরের বেনাপোল সীমান্ত অত্যন্ত সহজ রুট। বেনাপোল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গেলেই ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বনগাঁ শহর। প্রথমে পাচার করা নারীদের এ শহরে রাখা হয়। পরে তাদের সুবিধাজনক সময়ে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারী পাচারকারীরা বেশ কয়েকটি অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন। এর মধ্যে প্রেমের ফাদে ফেলে নারী পাচারকারীরা টার্গেট করছে মফস্বল এলাকার স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছাত্রী ও বিধবা এবং স্বামী পরিত্যাক্তাদের।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লোহাগড়া থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে কালিয়া থানা পুলিশ মিরাজ মোল্যাকে আটক করেছে। মিরাজ মোল্যা একজন আন্ত জেলা নারী পাচারকারী দলের অন্যতম প্রধান। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় তার নামে অন্তত সাতটি বিয়ে সংক্রান্তসহ অর্ধশত নারী পাচার ও মাদক দ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। কালিয়া থানায় মানব পাচার আইনে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে, মামলা নং ০৮/১৯ ।
Be the first to comment on "কালিয়ায় ভারতে নারী পাচারকারী চক্রের প্রধান মিরাজ মোল্যা গ্রেফতার"