নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে তরল কোকেন আনার মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের জামিন স্থগিত রেখেই হাই কোর্টে রুল শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
হাই কোর্টের দেওয়া জামিনের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ না ওঠায় আপাতত মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রামের মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নূর মোহাম্মদের।
হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনে চেম্বার আদালত নূর মোহাম্মদের জামিনে স্থগিতাদেশ দিয়ে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছিল শুনানির জন্য।
সেই শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার জামিন স্থগিতই রাখতে বলেছে।
সেই সঙ্গে জামিন প্রশ্নে হাই কোর্ট যে রুল দিয়েছিল, চার সপ্তাহের মধ্যে তার শুনানি করতে দুই পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
হাই কোর্টে বিচারপতি নুরুজ্জামানের বেঞ্চে ওই রুলের ওপর শুনানি হবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন শ ম রেজাউল করিম ও অ্যাডভোকেট রমজান আলী শিকদার।
আদেশের পর রমজান আলী বলেন, আদালত কোকেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে একটি সময় বেঁধে দিয়ে তদন্ত শেষ করতে বলেছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে গত ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।
পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বন্দরের পরীক্ষায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাগারেই তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ ও কর্মচারী গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলাটিতে চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।
গত ১৯ নভেম্বর এ মামলায় আটজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান। এতে ৫৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় অভিযোগপত্রে।
কিন্তু এজাহারভুক্ত প্রধান আসামির নাম অভিযোগপত্রে না থাকায় চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম রহমত আলী গত ৭ ডিসেম্বর তা গ্রহণ না করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কমকর্তাকে দিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দেন।
র্যাব-৭ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে।
বিচারিক আদালত নূর মোহাম্মদকে জামিন না দেওয়ায় তিনি হাই কোর্টে আবেদন করেন। ওই জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৬ জুন হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ অন্তবর্তীকালীন জামিন দেয়। সেই সঙ্গে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আবেদন করলে ২০ জুন চেম্বার বিচারপতি জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি সোমবার আপিল বিভাগে আসে।
Be the first to comment on "কোকেন মামলায় নূর মোহাম্মদের মুক্তি মিলছে না"