শিরোনাম

ছাত্রীর মাকে ধর্ষনের চেষ্টা করলো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ

নিউজ ডেস্ক : লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একই মাদ্রাসার ছাত্রীর মাকে ধর্ষনের চেষ্টা করার অভিয়োগে দায়ের করার ১৮দিন পর রবিবার রাতে থানায় মামলা রেকর্ড হয়। পুলিশ সুপারের সাথে ছাত্রী ও ছাত্রীর মা দেখা করার পর মামলা রেকর্ড হয় বলে জানা যায়। এই মামলায় মাদ্রাসাটি একজন প্রভাষক হামিদুর রহমান স্বাক্ষী হয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী হওয়ায় প্রভাষককে মাদ্রাসার চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অধ্যক্ষ।

থানা পুলিশ ও মামলার বিবরণে জানা যায়, জেলা সদরের আদর্শ পাড়ায় ভাড়াবাসায় বসবাসরত জনৈকা কামিল পরীক্ষার্থী মেধাবী ছাত্রী ও তার মা বসবাস করে আসছে। ছাত্রীটির বাবা প্রবাসী। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন ও একই প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক হামিদুর রহমানসহ ছাত্রীটির খোঁজ খবর নিতে যায়। সরল বিশ্বাসে মা ও মেয়ে শিক্ষক দুই জনকে আপ্যায়ন করে। আপ্যায়ন পর্ব শেষে অধ্যক্ষ প্রভাষক হামিদুর রহমানকে পাশের পড়ার রুমে গিয়ে মেধাবী ছাত্রীটিকে দাখিল পরীক্ষার সাজেশন দিতে বলে। এদিকে অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন ছাত্রীর মাকে ছাত্রীটির ভবিষৎ পড়াশুনা সর্ম্পকে নানা সৎ পরামর্শ দেয়। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন ছাত্রীর মাকে জাপটে ধরে বিছানায় ফেলে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। নিরুপায় হয়ে ছাত্রীটির মা চিৎকার দিয়ে উঠে। পাশের পড়ার রুম হতে ছাত্রীটি ও প্রভাষক হামিদুর রহমান দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে। তখন অধ্যক্ষকে আপত্তিকর অবস্থায় বিছানায় দেখতে পায়। ঘটনা বেগতিক দেখে অধ্যক্ষ দ্রুত বাড়ি হতে সটকে পড়ে। ছাত্রীর মা এই বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অন্যান্য প্রভাষকদের জানান। ঘটনা প্রকাশ পেলে অধ্যক্ষ লোক মারফর খবর দিয়ে হুমকি দেন। বাড়াবাড়ি করলে ও থানায় মামলা দায়ের করলে দাখিল পরীক্ষার্থী তার মেয়েকে পরীক্ষা দেয়ার সময় বহিস্কার করা হবে বলে হুমকিও দেয়। মেয়ের ভবিষৎ চিন্তা করে শ্লিতাহানীর শিকার ছাত্রীটির মা বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে চেপে যায়। এখন মেয়ের দাখিল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সে মানুষিক ভাবে চাপ মুক্ত হয়েছে। ফলে চলতি বছরের ২২ মার্চ অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা দায়ের করে। এই মামলায় মেয়ে ও প্রভাষক হামিদুর রহমানকে স্বাক্ষী করে। এদিকে অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে শ্লিতাহানীর ঘটনায় প্রভাষককে স্বাক্ষী হওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রভাষকে প্রতিষ্ঠান হতে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন জামায়াতের রাজনৈতিক একজন স্বক্রিয় কর্মী। কুড়িগ্রামের কুখ্যাত রাজাকার জামায়াতের নেতা কথিত পীর পনির উদ্দিনের সহচর ছিলেন।

একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টি আপোষমিমাংসা করে নিতে ছাত্রী ও তার মাকে নানা ভাবে হুমকি ও মানুষিক চাপ সৃষ্টি করছে। প্রভাবখাটিয়ে থানায় দায়ের করা মামলাটি রের্কড না করে ফেলে রাখা হয়। পরে ছাত্রী ও তার মা রবিবার লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার এটিএম মোজাহেদুল ইসলামের কাছে যায়। তাকে বিস্তারিত খুলে বলে। এসপির নির্দেশে অভিযোগ দায়েরের ১৮ দিন পর মামলা রেকর্ড হয়। এই ঘটনাটি লালমনিরহাটে ‘টক অফ দ্য টাউনে’ পরিনিত হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে ছাত্রীদের পড়াশুনা করতে পাঠাতে অভিভাবকরা নিরাপদ বোধ করছে না। ফলে মাদ্রাসায় কয়েক দিন ধরে ছাত্রী উপস্থিতির হার কমে গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ লম্পট অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে দাবি তুলেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেছে।

এদিকে একটি সূত্র দাবি করেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের সাতদরগা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ থাকার সময় ২০১২ সালে কুড়িগ্রামে জনৈকা মহিলাকে ধর্ষন করে। এই ধর্ষনের অপরাধে দুই বছর কারাবরণ করে। এই বিষয়ে ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা হতে প্রকাশিত মানবজমিন ও রংপুরের স্থানীয় পত্রিকা যুগের আলোসহ কয়েকটি পত্রিকায় রির্পোট প্রকাশ হয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় বসবাসরত আপন ভাগ্নির শ্লিতাহানীর চেষ্টারও অভিযোগ আছে। এই বিষয়ে তার ভাগ্নি জামাই মোঃ জামাল উদ্দিন ১১ সালের ২২ জুলাই তৎকালিন উলিপুর সাতদরগাহ নেছারিয়া আলীয়া মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে লিখিত অভিয্গো দায়ের করে। ফলে তাকে মাদ্রাসা হতে বরখাস্ত করা হয় বলে জানা যায়।

অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন ১৫ সালের ২৮ মার্চ লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে। সেই সময় এই মোসলেম উদ্দিনের নারী কেলেংকারী ও অবৈধ নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়। প্রভাবশালী চক্রের কারনে অর্থ বিলিয়ে পাড় পেয়ে যায়।

basic-bank

Be the first to comment on "ছাত্রীর মাকে ধর্ষনের চেষ্টা করলো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*