শিরোনাম

জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে এসে তথ্য দিলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার

নিউজ ডেস্ক : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন থেকে কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে ও জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য দিলে তাকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় জঙ্গি বিরোধী অভিযান শেষে আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন র‍্যাবের মহাপরিচালক।

জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়ার যমুনা তীরবর্ত্তী এলাকা সারিয়াকান্দি ও ধুনটের দূর্গম চরাঞ্চলে সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী অভিযান চালায়। র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্ময়ে গঠিত যৌথ বাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দিনভর সারিয়াকান্দির চরের ১০ টি গ্রাম ও ধুনটের চরের ৫টি গ্রামে চলে। র‌্যাব বিজিবি ও পুলিশের প্রায় ৫শ’ সদস্য এই অভিযানে অংশ নেয়। অভিযানে তিনিটি চাপাতি, তিনটি ছুরি, জেহাদী বই,  এক কয়েল তারের কুন্ডলি,  ম্যাগাজিন রাখার পেটি (থলে)উদ্ধার করা হয়।

সূত্র জানায় ওই দুই উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চলে গোপনে জঙ্গীদের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়েছে যা অব্যাহত থাকবে। যমুনার এই চরগুলো উপজেলা সদর থেকে নদীপথে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পৌঁছতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘন্টা।  র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজরি আহমেদ চালুয়ার জামথৈল চরের শাহজালাল বাজারে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, শোলাকিয়ায় হামলাকারি গ্রেফতার করা জঙ্গী শফিকুলকে যমুনার চরাঞ্চলে অস্ত্র ও বোমা প্রশিক্ষন দিয়ে কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয় হামলার জন্য। এমন তথ্যের ভিত্তিতে এবং পূর্বের তথ্যসূত্র ধরে যমুনার চরাঞ্চলে অভিযান চালান হয়। র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন জঙ্গীদের তথ্য দেয়া হলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার এবং যে সব জঙ্গী আতœসমর্পন করবে তাদের প্রত্যেককে দশ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। যারা তথ্য দেবেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং পরিবারের নিরাপত্তা দেয়া হবে। বেনজির আহমেদ বলেন, অশান্তির শকুনেরা কোমলমতি কিশোরদের মগজ ধোলাই করে কসাইদের মতো ব্যবহার করছে। তাদের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। চরাঞ্চলে যাতে জঙ্গীরা আশ্রয় না পায় সে জন্য সজাগ থাকতে বলেন। সচেতনতা গড়ার লক্ষ্যে তিনি বলেন জঙ্গীদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তারা সংখ্যায় বেশি নয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দমন করবেই।

আরেক সূত্রের খবর- অভিযানে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে এবং এখনও মিলছে। এইসব তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বগুড়ার গাইবান্ধা রংপুর কুড়িগ্রামসহ প্রত্যেক চরেই নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে। বগুড়ায় অভিযানের সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা চরগ্রামের মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বক্তব্য দিয়ে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কিছুদিন ধরেই নানা মাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছিল জঙ্গীরা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার দূর্গম চরে অবস্থা নিয়ে বিপথগামী তরুণদের দলে ভিড়িয়ে অস্ত্র চালনা ও বোমা বিস্ফোরনের প্রশিক্ষন দিচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গী হামলা এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদের জামাতের অল্প দূরে জঙ্গী হামলার বিষয়টি তদন্ত করতে দূর্গম চরে প্রশিক্ষনের তথ্য পায় পুলিশ ও র‌্যাব। বিশেষ করে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলার পর হামলাকারী ৫ জঙ্গীর পরিচয় উদঘাটনে বগুড়ার দুই জনের সন্ধান মেলে। যার একজন শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের বাড়ি ধুনটের চিথুলিয়া গ্রামে। শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলাতেও বগুড়ার এক জঙ্গীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে ঘটনায় গ্রেফতার করা ব্যক্তির কাছ থেকে। যমুনার দূর্গম চরে যে জঙ্গী মহড়া ও প্রশিক্ষন হয় তার আঁচ পাওয়া যায় এলাকার মানুষের কাছ থেকে। লোকজন বলাবলি করে, মাঝে মধ্যেই গভীর রাতে চরের ভিতরে বোমা বিস্ফোরনের মতো বিকট আওয়াজ শোনা যায়। এই শব্দ কিসের তা ঠাহর করতে পারে না তারা। তবে সোমবারের যৌথ বাহিনীর অভিযান দেখে এলাকার লোকজনের কথা- তাদের এতদিনের ধারনা ভুল ছিল না।

বগুড়ার সারিয়াকান্দির চর উত্তর ও দক্ষিন ট্যাংরাকুড়া, পাকেরদহ, গুচ্ছগ্রাম কোটাপুর জামথৈল ঘাঘুয়ারচর কাজলার চর  সহ ১০ গ্রাম এবং ধুনটের নিমগাছি সোনাহাটা নানন্দিয়া নাংলু ও ফরিদপুরে অভিযান চালান হয়। র‌্যাব-১২ কমান্ডিং অফিসার শাহাবুদ্দিন খান, র‌্যাব-৫ এর মেজর মঞ্জুর মোরশেদ, র‌্যাব-১৩ এর মেজর মাহমুদ, বগুড়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান সহ উর্ধতন কর্মকর্তা অভিযানে ছিলেন। বগুড়ার সীমানা জামালপুর জেলার জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন অভিযানের সময় ছিলেন। উল্লেখ্য সারিয়াকান্দিতে যমুনার চরের ওপারের জামালপুর জেলার চর এলাকা। জঙ্গী ও দুস্কৃতিরা এক এলাকায় অপরাধ করে পাশের এলাকায় গিয়ে শেল্টার নেয়্। এই বিষয়ে র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তাগন বলেন দেশের প্রতিটি চরাঞ্চলেই নজরদারি করা হবে এবং অভিযান চলবে। জঙ্গীদের নির্মূল করতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে এসে তথ্য দিলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*