নিউজ ডেস্ক : জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে টানা বেলা ২টা পর্যন্ত। প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দিয়ে নিজ নিজ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান এবং ২০ জন সদস্য নির্বাচিত করতে যাচ্ছে। অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলা (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) এ নির্বাচনের বাইরে রয়েছে।
তবে এদিন নির্বাচন হয়নি বেশ কয়েকিটি জায়গায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। বগুড়ায় হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ও তিনটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে, নোয়াখালীর একটি ওয়ার্ডে সবকটি পদে এবং তিনটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে, কুড়িগ্রামে আদালতের নির্দেশে জেলার ৬ নং ওয়ার্ডের (ফুলবাড়ী উপজেলা) একটি কেন্দ্রে সব পদে, সাতক্ষীরা জেলার ১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে সব পদে উচ্চ আদালতের নির্দেশে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরাইল উপজেলায় সাধারণ সদস্য পদে, হবিগঞ্জে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আদালতের নির্দেশে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে, কক্সবাজারে উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে এবং গাইবান্ধায় ৮ ও ১০ নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে দুই প্রার্থীর বৈধ্তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকে।
এদিকে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ইতোমধ্যে ২১টি জেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে ভোলা ও ফেনী জেলায় চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ দুই জেলায় কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বাকি ১৯ টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন না হলেও সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং সদস্য পদে সবমিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮জন। মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৪৩জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩জন এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৮০০জন। ভোটকেন্দ্র ৯১৫টি ও ভোটকক্ষ ১ হাজার ৮৩০টি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
২০০০ সালে আইন প্রণয়ন হলেও ১৬ বছর পর হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন। অপরদিকে এটাই হতে যাচ্ছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসির শেষ নির্বাচন।
সরাসরি ভোটাধিকার না থাকায় এবং আওয়ামী লীগ ব্যতিত অন্যে কোন রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সাধারণ জনগণের এ নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ নেই। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী জেলায় কিছুটা উত্তাপ রয়েছে।
এই নির্বাচনকে ‘তামাশার নির্বাচন’ এবং জনগণের ‘ইচ্ছার প্রতিফলন নেই’ বলে বিএনপির নেতারা মন্তব্য করেছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ একে আইয়ুব খানের ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’র সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা একটা পর্যায়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং মেসেজ যায়। যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি।
দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ব্যাপক টাকা ছড়াছড়ি ও সরকার দলের এমপিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা তা আমলে নেননি। মঙ্গলবার রাতেও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আটটি সংস্থার ১ হাজার ৩৩৯ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি।
Be the first to comment on "জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ শেষ"