নিউজ ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে ছয় জেলায় শিশুসহ ২১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের বাশঁখালীতে জলোচ্ছ্বাসে শিশুসহ সাতজন, পাহাড় ধসে ও টিন চাপা পড়ে মা-ছেলেসহ আরও তিনজন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া তিনজন, ভোলায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে তিন জন, লক্ষ্মীপুরে গাছ চাপায় একজন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় জোয়ারে ভেসে মা-মেয়েসহ তিনজন এবং পটুয়াখালীতে ঘর ভেঙে আরও একজন মারা যান।
চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বাঁশখালী উপজেলায় দুই শিশুসহ সাতজন ভেসে যায়। পরে এদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তারা হলেন, খানাবাদ ইউনিয়নের আবু সিদ্দিক (৫৫), বুলবুল আকতার (৫৭), জালাল আহমদ (৩৮) ও হোসেন আহমদ (৭)। এছাড়া চরোয়া ইউনিয়নের তিন বছরের শিশু তাহেরা বেগম। অন্য দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামসুজ্জামান জানান, বিকেলে জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়িবাঁধ ভেঙে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। এতে সাতজন ভেসে যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রবল বৃষ্টির কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী কাজল বেগম (৫০) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন (১২)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম ভূইয়া জানান,ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়। এরপর শনিবার সকালে পাহাড় ধসে পড়লে রফিকুল ইসলামের ঘর মাটি চাপা পড়ে। এতে তার স্ত্রী ও ছেলের মৃত্যু হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে শনিবার দুপুরে আম কুড়াতে গিয়ে নগরীর পাঁচলাইশে মো. রাকিব (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, দুপুর ১টার দিকে শিশুটি পাঁচলাইশে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে আম কুড়াতে যায়। এ সময় ঝড়ে উড়ে আসা একটি টিনের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয় সে। তিনি জানান, পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর শিশুটি মারা যায়।
কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কক্সবাজার জেলায় তিন জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জলোচ্ছাসে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে ঘুর্ণিঝড় কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে। দুপুর নাগাদ এটি চট্টগ্রাম নোয়াখালী উপকূলের দিকে এগিয়ে যায়। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, ঘুর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া উপজেলায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে আলী আকবর ডেইল এলাকায় নৌকা থেকে পড়ে মারা যান ফকির আলম (৫০)। ঝড়ে দেয়াল চাপা পড়ে মারা যান কৈয়ারবিল এলাকায় একে ফজলুল হক (৫৪)। এছাড়া পানিতে ডুবে মারা গেছেন মো. ইকবাল (২৫)।
ভোলা: ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় গাছ ভেঙে ও ঘর ধসে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)।
বাংলদেশ রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দবীন সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। ভোর ৪টার দিকে ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে গেলে ঘর চাপা পড়ে আকরাম আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৬টায় সে মারা যান। এছাড়া ঝড়ে গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়ে মারা যান রেখা বেগম।
অপরদিকে দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রেনু বিবি ঘরচাপায় মারা যান।
পটুয়াখালী: প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে শনিবার সকালে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে প্রবল ঝড়ো বাতাসে শনিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঘর ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে নয়া বিবি (৫২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।
লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর তেওয়ারীগঞ্জ এলাকায় গাছ পড়ে আনার উল্যাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, তেওয়ারীগঞ্জ বাজার এলাকায় ঝড়ের সময় একটি গাছ চাপা পড়ে আহত হন আনার উল্যাহ। পরে লক্ষ্মীপুরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আনার উল্যাহ গাছ চাপা পড়ে মারা যান।
হাতিয়া (নোয়াখালী): ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল জোয়ারে হাতিয়া উপজেলায় মা ও মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, ২নং চানন্দী ইউনিয়নে নলের চর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৫) এবং তার মেয়ে মরিয়ম নেছা (১০) এবং জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে চরহেয়ার গ্রামের সালাউদ্দিন ব্যাপারীর স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৪৭)। শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইন উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রবল জোয়ারে মা-মেয়েসহ তিনজন ভেসে যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
Be the first to comment on "ঝড়ে ছয় জেলায় ২১ জনের মৃত্যু"