নিউজ ডেস্ক: আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ দেখা না দিলে লিচু রাজ্য হিসেবে পরিচিত ও দেশব্যাপী লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে এবার হাজার কোটি টাকার লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুরে এখন যে দিকেই চোখে পড়বে সেদিকেই দেখা যাবে থোকায় থোকায় লিচু। এ যেন এক সবুজ ফলের সমারহ। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার দূর্যোগপূর্ণ পরিবেশে পড়তে হয়নি লিচু চাষিদের। তাই লিচু চাষিরাও স্বপ্ন দেখছেন রেকর্ড পরিমাণ লিচু উৎপাদনের।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙ্গিণার লিচু গাছে থোকায় থোকায় লিচু ঝুলছে। বাগানীরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত।
রাত জেগে বাগান পাহারা দেয়া এক লিচু চাষি জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু হওয়া থেকে বাগানের পরিচর্যা শুরু হয়েছে। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী, রংপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাফয়েত হোসেন জানান, কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছনি। কোন সময় কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। এবার দিনাজপুরের লিচু পশ্চিমা বিশ্বের দেশ গুলোতেও রফতানি করা হবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, লিচু চাষে দিনাজপুরে রীতিমত বিপ্লব ঘটেছে। ২০১২ সালে দিনাজপুরে ১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হতো, যা বছর বছর বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালে এসে ৪ হাজার ১৮০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র আরো জানায়, হেক্টরে ২৪৭টি লিচু গাছ হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী দিনাজপুরে এবার ১০ লাখ ৩২ হাজার ৪৬০টি গাছে লিচুর ফলন হয়েছে। গড়ে প্রতিটি গাছে ৪ হাজার করে লিচু হিসাব করলে পরিমাণটা দাঁড়ায় ৪১ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার। আগাম প্রতি ১শ লিচুর দাম মাদ্রাজি-২০০ থেকে ৪০০, বোম্বাই-২০ থেকে ৪০০, বেদানা-৭০০-১১০০ ও চায়না থ্রি-৬০০-১১০০ গড় মূল্য হিসাবে ১ হাজার ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার ৬৬৭ টাকার লিচু উৎপাদন হবে।
জেলা তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলায় লিচু উৎপাদনে প্রতি একরে সার, নিড়ানী, সেচ ও বালাই নাশকে খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ৩ লখ টাকা।
দিনাজপুরে মাদ্রাজি ৩০%, বোম্বাই ৩৯%, বেদানা ৫%, চায়না থ্রি ২৫% ও কাঠালী বোম্বাই ১% জমিতে চায় হয়। যা মোট উৎপাদনের ২০% দিনাজপুর জেলায় ও ৮০% দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশে বিক্রি হয়ে থাকে।
দিনাজপুর জেলার মধ্যে সদর উপজেলার কসবা, মাসিমপুর, সৈয়দপুর, মাহমুদপুর, নশিপুর ও জয়দেবপুর, বিরল উপজেলার মাধববাটি, রসুল শাহপুর, রানীপুকুর, মঙ্গলপুর, মাটিযান দিঘী, আজিমপুর, লক্ষ্মীপুর, জগতপুর ও রাজুরিয়া, বীরগঞ্জ উপজেলার চাকাই, কল্যাণী, পাল্টাপুর, ধূলাউড়ি, মরিচা ও শিবরামপুর, চিরিরবন্দর উপজেলার গলাহার, আরজি গলাহার, কাদরা, কিষানপুর, জয়দেবপুর ও বিরামপুর উপজেলার শিমুলপুর, দূর্গাপুর, মামুদপুর ও মির্জাপুর লিচু উৎপাদনের জন্য উল্লেখযোগ্য।
এদিকে, সদরের কালিতলা, মাসিমপুর, পুলহাট বিরলের মাধববাটি, চিরিরবন্দরের মাদারগঞ্জ ও বীরগঞ্জের বীরগঞ্জ হাট এবং বিরামপুরের বিরামপুর বাজারে লিচু বিক্রির বাজার বসে।
দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি ও কাঠালী উল্লেখয্যেগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
সূত্র: জাগো নিউজ

Be the first to comment on "দিনাজপুরে লিচু উৎপাদনে হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা"