নিউজ ডেস্ক: দেশে বেসরকারি পর্যায়ে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবার নামে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছেয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ছাড়াই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা নামসর্বস্ব এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ।
জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা মোট ১৩ হাজার ৩৪১টি। তন্মধ্যে ৪ হাজার ২৮০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ৯ হাজার ৬১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছরে (২০১৪-১৫ সাল) পাঁচ হাজারেরও বেশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে বৈধ অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ হিসেবে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৭টি করে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন পেয়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক অবজারভেটরি অন পাবলিক হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পলিসি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে এ সময়ে নতুন ১ হাজার ২৯৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ৩ হাজার ৮৪১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন দেয়া হয়। সম্প্রতি তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত বিজটেক বি টু বি সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন কমিটির বর্তমান সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এখন সেবা নয়, ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে আর দশটা ব্যবসার মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নামে দোকান খোলা হচ্ছে।
নিয়্ন্ত্রণকারী সংস্থার মনিটরিং, সুপারভিশন ও আন্তরিকতার অভাবে বৈধ অনুমোদন নিয়ে এ দোকানদারী চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বিশ্বের আর কোনো দেশে অল্প সময়ে এত সংখ্যক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার নজির নেই। কিভাবে এত প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেল বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে দেশে ২ হাজার ৯৮৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ৫ হাজার ২২০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল। পরবর্তী দুই বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ২৮০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৯ হাজার ৬১টিতে দাঁড়ায়। সেই হিসেবে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বৃদ্ধির হার শতকরা ৬৯ ভাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় তিন যুগের পুরোনো ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ এর মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে। পুরোনো অধ্যাদেশ অনুসারে বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি পাওয়া সহজ।
গত দুই বছরে বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে তারা বলেন, রোগীদের কাছে সহজে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে অধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও দুই বছরে পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানের বৈধ অনুমোদন দেয়া উচিত হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
তারা আরো বলেন, নতুন করে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা আইন প্রণীত হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই খসড়া চূড়ান্ত হবে। নতুন আইন হলে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যর্থ হলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে।
তবে এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
সূত্র: জাগো নিউজ

Be the first to comment on "দুই বছরে ৫ হাজার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন!"