নিউজ ডেস্ক: বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিম জালিয়াতি করে বিকাশের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মোবাইল অপারেটর রবির সিম ব্যবহার করে এসব জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার।
রোববার বিকালে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা একটি অপরাধী চক্র গ্রেপ্তার করেছি, তাদের মাধ্যমে শুধুমাত্র রবি থেকে দেখা যাচ্ছে, ফিঙ্গার প্রিন্ট যেটা নেওয়া হচ্ছে, এটা যে কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েই সিম তুলে ফেলতে পারছে। একই মোবাইলের সিম বার বার তোলা হচ্ছে।”
অবশ্য রবির দাবি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিম প্রকৃত মালিক ছাড়া তোলা সম্ভব নয়।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় এখন আর আঙুলের ছাপ না দিয়ে সিম কেনা বা নিবন্ধন সম্ভব হওয়ার কথা নয়। তবে এ পদ্ধতিতে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য চুরি করে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে জনমনে উদ্বেগ ছিল। এ নিয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদনও হয়েছিল।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই জনগণকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, তথ্য চুরি ঠেকানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হলে সেজন্য অপারেটরকে জরিমানাও গুণতে হবে।
পুলিশ সুপার জানান, সাতকানিয়া থানার রঙ্গিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নাহার অভিযোগ নিয়ে এলে তারা সিম জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারেন।
ওই নারীর অভিযোগ, গত ২১ এপ্রিল তার নামে নিবন্ধিত রবি সিমটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, যে সিম তিনি বিকাশ অ্যাকাউন্টের জন্যও ব্যবহার করতেন।
সিম বন্ধের কারণ জানতে নুরুন্নাহার সাতকানিয়ায় রবি সেবা কেন্দ্রে গেলে তাকে বলা হয়, অন্য আরেকজন ‘ওই সিম তুলে নিয়েছেন’।
নুরুন্নাহার পুলিশকে বলেছেন, বৈধ মালিক হিসেবে তিনি পুনরায় ওই সিম তোলার পর দেখতে পান, তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা ২০ হাজার ৪০০ টাকা তুলে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ সিম তোলার সময় ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর নিয়ে কুতুব উদ্দিন (৩২) ও মো. ফরহাদ (৩০) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
ওই দুইজন আগে বিকাশ এজেন্ট ও সিম ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন বলে পুলিশের তথ্য।
চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) একেএম এমরান ভূঁইয়া জানান, গ্রেপ্তার ফরহাদ তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ১০০টি এবং কুতুব ৫৭টি সিম তুলেছিলেন।
“এসব সিমের অধিকাংশের মালিক অন্য লোক। আমরা তাদের অনেকের সঙ্গে যোগযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, তাদের সিমও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে তারা আবার তুলেছেন।”
পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সর্বশেষ রিচার্জের পরিমাণ বলতে পারলে খুব সহজেই যে কেউ নিজের নামে সিম তুলতে পারছেন বলে তারা রবি মনোনীত এজেন্টদের কাছে জানতে পেরেছেন।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (আঙুলের ছাপ দিয়ে) সিম নিবন্ধনের পর সেই সিম এভাবে তুলে ফেলার সুযোগকে একটি ‘বড় দুর্বলতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।
“এটি একটি দুর্বলতা। সম্ভবত তাদের (রবি) সিকিউরিটি সিস্টেম শক্তিশালী করা হয়নি। কিন্তু অন্যান্য মোবাইল অপারেটর যারা আছে, সেক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়।”
পুলিশ কর্মকর্তা এমরান বলেন, তোলা ‘সহজ হওয়ায়’ রবির গ্রাহকদের ‘টার্গেট করা হচ্ছিল’ বলে গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
“তারা অবৈধভাবে সিম তোলার পর বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে সিমটি ফেলে দিত। এভাবে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।”
অবৈধভাবে তোলা সিম থেকে কীভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন কোড পাওয়া গেছে বা এসব সিম আর কী কী কাজে ব্যবহার করা হত- তা জানতে গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে এমরান ভূঁইয়া জানান।
এক্ষেত্রে রবির কোনো দুর্বলতা থাকার কথা অস্বীকার করে কমিউনিকেশনস ও করপোরেট রেসপনসিবিলিটি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবির বলেন, “বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিম প্রকৃত মালিক ছাড়া কোনোভাবেই পুনরায় উত্তোলন সম্ভব নয়। এখানে অন্য কোনো গল্প থাকতে পারে, যে বিষয়টি আমরা জানি না।”
এভাবে নিবন্ধিত সিম তুলে ফেলে জালিয়াতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সহকারী পুলিশ সুপার এমরান ভূঁইয়া বলেন, “টাকা আত্মসাৎ করা তাদের উদ্দেশ্যে হলেও উত্তোলন করা এসব সিম জঙ্গি তৎপরতা বা নাশকতার কাজেও ব্যবহার হতে পারে।”
আর তেমন কিছু ঘটলে নিরপরাধ সারাধণ মানুষ ‘ঝামেলায় পড়বে’ বলে মন্তব্য করেন এমরান।
Be the first to comment on "‘নিবন্ধিত সিম’ জালিয়াতি করে টাকা লোপাট"