নিউজ ডেস্ক : ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েও ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর মনোনিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর ফলাফল সংশোধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রকাশ করা হয়েছে সংশোধিত ফলাফল। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) ঘটনার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে এক অবস্থার জন্য দায়ী করেছে নাসরিন হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থীকে।
এর আগে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনিত হয়ে গেছেন এক ভাগ্যবান শিক্ষার্থী- এমন খবর দুদিন ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রশ্নের মুখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম।
ঘটনার টের পেয়েই উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তদন্ত করে এর রহস্য উদ্ঘাটনসহ এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার ঘোষণা দেন। বলেন, এটা সুখবর যে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে বলে ফল প্রকাশ হয়েছে তার পক্ষ থেকেই অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। শিক্ষার্থী সৎ বলেই বিষয়টি জানিয়েছে। তবে অবশ্যই এর রহস্য বের করা হবে। কারন এত বড় ঘটনাতো হতে পারেনা।
জানা গেছে, ভর্তির এ কেলেঙ্কারীরই জন্ম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইআর। ইনস্টিটিউটের অধিন এমএড (ইভিনিং) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৮ নবেম্বর। এখানে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন পল্লাবী বাড়ৈ নামের এক প্রার্থী। যার রোল নম্বর ২৫৫৩। তবে আবেদন করলেও অসুস্থতার জন্য বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এ সদস্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। অথচ ফল প্রকাশ করার পর দেখা গেল মেধা তালিকায় পল্লাবী বাড়ৈর নাম। আইইআর এর নোটিশ বোর্ডে ফলাফল টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে পল্লবী বাড়ৈর মেরিট স্কোল ৭৬ এবং মেরিট পজিশন ৪১। বিষয়টি প্রথম নজরে এসেছে পরীক্ষায় অংশ নেয়া এ প্রার্থীর কয়েক পরিচিত ব্যক্তির। তারাই তাকে ফোন করে জানান যে, মেধা তালিকায় নাম উঠে এসেছে। এরপর ঘটনার রহস্য উন্মেচনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে আবেদন করা হয়।
এদিকে, ঘটনায় নিয়ে যখন সমালোচনা শুরু হয়েছে ঠিক তখন শুক্রবার ঘটনার পুরো দায় তৃতীয় এক শিক্ষার্থীর ঘাড়ে চাপিয়ে গণমাধ্যমে ব্যখ্যাসহ সংশোধিত ফল প্রকাশ করেছেন আইইআর এর পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম ও মাস্টার্স অভ এডুকেশন (সান্ধ্য) ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ‘একজন পরীক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার সংশোধিক ফলাফল প্রকাশ’ শিরোনামে এক ব্যাখ্যায় ভর্তি কমিটির সভাপতি ও পরিচালক বলেছেন, ১৮ নবেম্বর অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারি নাসরিন হোসাইন (রোল-২৫৫৮) অংশগ্রহন করেন। আইইআর ভবনের ২০৭ নম্বর কক্ষে তার আসন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু প্রবেশপত্রে ২৫৫৮ শেষ অংক ৮ অস্পষ্টতার কারনে তার নিকট ৩ প্রতিয়মান হওয়ায় তিনি ভুলক্রমে ২১৮ নং কক্ষের রোল নম্বর ২৫৫৩ আর আসনে পরীক্ষায় অবতীর্ন হন। রোল-২৫৫৩ এর পরীক্ষার্থী পল্লবী বাড়ৈ অনুপস্থিত থাকায় নাসরীন হোসাইন উপস্থিত পত্রে ২৫৫৩ রোলের বিপরতীতে সাক্ষর করেন। পরবর্তীকালে ফল প্রস্তুতকালে কম্পিউটারের স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রামে রোল-২৫৫৩ এর নামে নাসরিন হোসাইনের ফল প্রকাশিত হয়।
আইইআর কর্তৃপক্ষ আরো দাবি করেছে, নাসরিন হোসাইন (রোল-২৫৫৮) ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে নিজের ভুল রোল লেখার বিষয়টি বুঝতে পেরে তা সংশোধনের আবেদন করলে তা যাচাই বাছাই করে ভ্রান্তি সংশোধন করেন। সংশোধিত ফল অনুসারে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থী পল্লবী বাড়ৈ (রোল-২৫৫৩) এর নামে প্রকাশিত ফল বাতিল করা হয় এবং নাসরিন হোসাইন (রোল-২৫৫৮) এর প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে তাকে উত্তীর্ন ঘোষণা করা হয়।
কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া ব্যখ্যায় বিভ্রান্তি দুর হবে দাবি করে বলেছে, সংবাদে জালিয়াতির বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে তা অমূলক ও ভিত্তিহীন। আশাকরি সংশোধিত ফলাফলের বিবরণ সংশয় দুর করবে। প্রয়োজনে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত নথি দেখে যাওয়ারও আহবান জানিয়েছেন পরিচালক ও পরীক্ষা কমিটির প্রধান।
এদিকে, বিতর্কের মুখে ফলাফলে ভুলের প্রমান পাওয়ায় বিষয়টিতে তদন্তের দাবি উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে কর্তৃপক্ষ যদি আগেই এত বিষয় যেনে থাকে তবে কেন প্রতিষ্ঠানটির নোটিশ বোর্ডে এখনো অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম ও রোল নম্বর মেধা তালিকায় টাঙিয়ে রাখা হয়েছে? ভূল সংশোধনের পরেও শুক্রবার দেখা গেলে নোটিশ বোর্ডের একই চিত্র।
এছাড়া ভুল করে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর আসনে বসায় নাসরীন হোসাইন উপস্থিত পত্রে ২৫৫৩ রোলের বিপরিতে সাক্ষর করেছেন বলে যে ব্যখ্যা দেয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারন ২৫৫৩ নাসরিন ভূল করলেও তার পাশে তার নাম থাকার কথা নয়। যেমন ফলাফলে দেখা গেছে রোল নম্বরের পাশেই সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর নাম লেখা আছে।
Be the first to comment on "পরীক্ষা না দিয়েও শিক্ষার্থী মনোনিত ॥ সংশোধিত ফল প্রকাশ"