নিউজ ডেস্ক ॥ অতি প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী ঘনঘন গতিপথ পরিবর্তন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন, ওড়িশায় আছড়ে পড়ার পর ফণী স্থলভাগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে। আর এর ফলে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হতে থাকবে। এবং বাংলাদেশে যখন সেটি ঢুকবে তখন সেটির শক্তি অনেকটাই দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু ফণী হঠাৎ করে গতিপথ পরিবর্তন করেছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, ওড়িশার স্থলভাগের গভীরে না গিয়ে ক্রমশ উপকূল বরাবর পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে সেটি । আর সে কারণেই উদ্বিগ্ন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। আবহাওয়া দপ্তরের সর্বশেষ খবর, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই ওড়িশা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে ঝড় শুরু হয়েছে।
সেই ঝড়ের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। ধীরে ধীরে সেই ঝড়ের গতিবেগ বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। মাঝরাত নাগাদ সেই ঝড়ই ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগ নেবে। উপকূলবর্তী এলাকায় তা ১১৫ থেকে ১২০-তে পৌঁছবে। আগে মনে করা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে উপকূলে ফণী ঘন্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়বে। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে আসার ফলে এর গতিবেগ হবে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। ফলে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে ঢেউয়ের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট হতে পারে। এদিন জোয়ার থাকায় বহু জায়গা জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশিষ্ট আবহাওয়া বিজ্ঞানী জে কে মুখোপাধ্যায় এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একটা ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র যত স্থলভাগের গভীরে এগ–তে থাকে, ততই তার শক্তিক্ষয় হয়। কিন্তু ফণী ওড়িশার উপকূলে স্থলভাগের উপরে ১৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়লেও, তার অভিমুখ স্থলভাগের গভীরের দিকে নয়। বরং উপকূল বরাবরই সে ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গের দিয়ে এগিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে যেহেতু তার বিস্তৃতির অনেকটা অংশ সমুদ্রের উপরেই রয়ে গিয়েছে, তাই পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছতে ফণী যতটা শক্তিক্ষয় করে ফেলবে মনে করেছিলেন আবহবিজ্ঞানীরা, তা হবে না। মনে করা হচ্ছে, ১০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে ফণী। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দিকে যাবার পথেও সেটি খুব বেশি দুর্বল হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ঝড়ের গতিপথ বদলের ফলে পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন আবহবিদেরা। ইতিমধ্যেই ফণীর প্রভাবে পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং কলকাতায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইছে। ইতিমধ্যেই মেদিনীপুরে ৪০টি কাচা বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। একটি আশ্রয় শিবিরের অস্থায়ী কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। তাজপুর, শঙ্করপুর, দিঘা, মন্দারমণি সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকার নিচু জায়গা থেকে গ্রামবাসীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে খাবারও মজুত করা হয়েছে। ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুরের সমস্ত হোটেল। রাস্তায় টহল দিচ্ছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মীরা। রাজ্যের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাঁচটি দল। প্রতিটি দলে আছেন ৪৫ জন সদস্য। দিঘায় পৌঁছেছে এনডিআরএফের একটি ব্যাটেলিয়ন। এছাড়া ১৩টি দল স্ট্যান্ড বাই রাখা আছে শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য। তৈরি রাজ্য প্রশাসনের অসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী ও দমকলও। তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। স্থানীয় বিডিও অফিস থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
Be the first to comment on "ফণী ফের শক্তি সঞ্চয় করে এগুচ্ছে"