নিউজ ডেস্ক: অর্থ পাচার মামলার আপিলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশকে রাজনৈতিক কূটকৌশল হিসেবেই দেখছে বিএনপি। দলটির মত, তারেক রহমানকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সরকার।
দলটির নেতারা বলছেন, সরকার তড়িঘড়ি করে একটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে। ওই নির্বাচনে তারেক রহমানকে দেখতে চান না সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কোনও কোনও নেতা বলছেন, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তা থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজার রায় হয়েছে।
এদিকে বিএনপির কেউ কেউ এও আশঙ্কা করছেন, তারেক রহমানের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি দেখা যেতে পারে। তার বিরদ্ধে চলা কয়েকটি মামলা ইতোমধ্যে সক্রিয় করা হয়েছে এবং যে কোনও সময় ওই মামলাগুলোর রায় আসতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এবং তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। আমি এই রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এই বক্তব্য উদ্ধৃত করেন।
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। কিন্তু এটা ভাবার যে, নিম্ন আদালতে খালাস পেয়ে এখন একেবারে জেল-জরিমানা। ফলে, বলা মুশকিল। এই মুহূর্তে জাতির সংকটে যেখানে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, সেখানে সরকার আবার রাজনৈতিক অপচর্চা শুরু করেছে। এটা দুঃখজনক।’
বৃহস্পতিবার অর্থ পাচার মামলার আপিলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই মামলায় তার ব্যবসায়ী বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন। মামলায় নিম্ন আদালত তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আর মামুনকে নিম্ন আদালত সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। মামুনের আইনজীবীরাও কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন। দুটি আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৬ জুন এই বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষায় (সিএভি) রাখেন।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। তবে এই রায় রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করে, সরকার একটি আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছে। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। এ দিক থেকে বিবেচনা করে তারেক রহমান, খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর রায় দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য করে রাখা।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান মনে করেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় পুরোপুরি রাজনৈতিক।
উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সরকার এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তারা জানে, এই ঐক্য এড়ানো রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়। ফলে, ঐক্যচেষ্টাকে বানচাল করতে চায় সরকার।’
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলটের দাবি, মধ্যবর্তী নির্বাচনের চিন্তা থাকতে পারে সরকারের। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় সরকারের ভীতি রয়েছে। এ কারণেই জনপ্রিয় নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায় সরকার।
এদিকে তারেক রহমানের রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপি, ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠনের। তবে সকাল থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর বাধার কারণে মিছিল করতে পারেনি নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে সোয়া দশটার দিকে প্রায় ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে, জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করতে সরকারের পরিকল্পনার অংশ তারেক রহমানের রায়।
Be the first to comment on "বিএনপির মূল্যায়ন: তারেককে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল"