নিউজ ডেস্ক : দু’মিনিটের জাদু ম্যাগির উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। তা হলে এত দিন যে অমিতাভ বচ্চন আর মাধুরী দীক্ষিতরা আরও বেশি করে তা খেতে বললেন!
কিংবা সময় মতো ফ্ল্যাট না পেয়ে যখন একটি বেসরকারি আবাসন সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কাছে হন্যে হয়ে আবেদন করলেন হতাশ ক্রেতারা! প্রশ্নটা উঠেছিল সেই সময়ও।
তারকারা কোনও সংস্থার পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন করে মোটা টাকা পান। কিন্তু সেই সব সামগ্রী বা পরিষেবার ভালমন্দের কোনও দায় কি বর্তায় না ওই তারকাদের উপরে? তা-ও যে সে তারকা নন। তাঁদের মধ্যে কেউ ভারতরত্ন, কেউ পদ্মশ্রী, কারও ঝুলিতে আবার পদ্মভূষণ!
এই সব বিতর্ক দানা বাধতেই নড়েচড়ে বসে সরকার। বিভিন্ন দলের সাংসদরাও দাবি করেন, তারকারা কেন কোনও বিজ্ঞাপন করার সময় দায় নেবেন না? তাঁদের কথাতেই তো বিজ্ঞাপনে দেখানো পণ্য বা পরিষেবা ব্যবহার করতে প্রলুব্ধ হন মানুষ! তা সে কোনও ক্রিম মেখে এক সপ্তাহে ফর্সা হওয়াই হোক কিংবা মাদক বা অন্য নেশার সামগ্রীর হাতছানিতে সাড়া দেওয়া।
গত বছরই সংসদে উপভোক্তা নিরাপত্তা বিল এনেছে সরকার। তার সূত্রে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করে, যে সেলিব্রিটিরা এই বিজ্ঞাপন করছেন, সেই পণ্য বা পরিষেবায় কোনও গলদ দেখা গেলে, তার দায় বর্তাবে ওই তারকাদের উপরেও। প্রথম বার অপরাধ করলে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা কিংবা দু’বছরের কারাবাস কিংবা দু’টোই হতে পারে। দ্বিতীয় বার অপরাধ করলে এই পরিমাণ বেড়ে হবে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছরের জেল।
বিষয়টি স্পর্শকাতর। সতর্ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাই মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার আগে এর সব দিক খতিয়ে দেখার জন্য একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি রয়েছেন এর নেতৃত্বে। মন্ত্রিগোষ্ঠীতে রয়েছেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, উপভোক্তা মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নড্ডা, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী, বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এই মন্ত্রিগোষ্ঠী নতুন আইনের সব দিক খতিয়ে দেখছে। সরকারি সূত্রের খবর, অভিযুক্ত সংস্থার সঙ্গে বিজ্ঞাপনে যে সেলিব্রিটির মুখ ব্যবহার করা হচ্ছে, তাঁদেরও দায়ী করা নিয়ে কোনও বিবাদ নেই। বিবাদ শুধু শাস্তির পরিমাণ নিয়ে। এক বার এটি চূড়ান্ত হয়ে গেলেই বিলটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। তার পর সংসদের আসন্ন অধিবেশনে পাশ করানো হবে।
তবে সরকারের এক সূত্রের মতে, এমন নয় যে সেলিব্রিটিরা নিজেদের দায়িত্বের কথা একেবারেই মাথায় রাখেন না। যেমন, সচিন তেন্ডুলকর কোনও মাদক পদার্থের বিজ্ঞাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অমিতাভ বচ্চনও আর নরম পানীয়ের বিজ্ঞাপন করছেন না। ছোট ছেলেমেয়েদের উপরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এই আশঙ্কায়। ফর্সা হওয়ার কোনও ক্রিমেরও বিজ্ঞাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রাণাবত। তবে সব তারকারই এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। কারণ, বিভিন্ন সংস্থা বিজ্ঞাপন করানোর জন্য সেলিব্রিটিদের কোটি কোটি টাকা দেয়। আর তার জোরে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে তারা। দেশের আমজনতার কথা না ভেবে শুধুমাত্র নিজেদের ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স বাড়ানোর কথাই চিন্তা করে দায় এড়াতে পারেন না তাঁরা— বিলের মূল ভাবনা এটাই।
সূত্র : আনন্দবাজার প্রত্রিকা
Be the first to comment on "ভণ্ড বিজ্ঞাপনে তারকাদের সাজা কত, ভাবছে সরকার"