যত অভিযোগ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে

নিউজ ডেস্ক : নিষিদ্ধ ভারতীয় চ্যানেল ‘পিস টিভি’র মালিক জাকির নায়েকের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তাকে ঘিরে বিতর্ক বহুদিনের। ঢাকার গুলশানে ১ জুলাইয়ের জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুজন জাকির নায়েকের অনুসারী ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরই নতুন করে আলোচনায় আসেন জাকির নায়েক। যিনি বিভিন্ন সময় ইসলাম, জঙ্গিবাদ, জিহাদ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বিতর্কিত ও নিষিদ্ধ হয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মালয়েশিয়ায়। চিকিৎসাবিদ্যায় পড়াশোনা করলেও তিনি কথা বলেন ধর্ম নিয়ে। নিজের মতামত, ধর্মীয় ব্যাখ্যা সম্প্রচারের জন্য খুলেছেন টিভিও। তার বক্তব্য বাংলাসহ নানা ভাষায় তরজমা হয়ে প্রচার পায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জঙ্গিবাদের প্ররোচনার অভিযোগে বাংলাদেশ ও ভারতে বন্ধ করা হয়েছে তার মালিকানাধীন পিস   টিভির সম্প্রচার। তার বিরুদ্ধে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও সন্ত্রাসে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন দেশের আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদরা তার অনেক বক্তব্যকে বিতর্কিত বলে মনে করেন। সন্ত্রাসবাদে উসকানির অভিযোগে ২০১০-এর জুনে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া নিষিদ্ধ করেছে জাকির নায়েককে। বাংলাদেশের আলেমরাও দীর্ঘদিন থেকে তার বক্তব্যের সমালোচনা করে আসছেন। তার বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের ভিডিও রয়েছে ইউটিউবেও।

বিতর্কিত যত বক্তব্য : জাকির নায়েক বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের সন্ত্রাসী হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর বাণী যাচাই করতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে। যদি বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলে যায়, ধরে নিন এটি আল্লাহর বাণী।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির ফতোয়া দেওয়া বৈধ। কারণ ফতোয়ার অর্থ হলো মত পেশ করা।’ (সায়েন্স আওর কোরআন, পৃ. ৪৩)। এ ছাড়া তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের নামে তিনি আল্লাহকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু নামে ডাকা যাবে বলে মত দিয়েছেন (লেকচারসমগ্র-১, পৃ. ২৬৫)। তার বক্তব্যে রয়েছে ‘রাম ও কৃষ্ণ নবী হতে পারেন’ (লেকচারসমগ্র ভলিউম-২, পৃ. ১৬২)। ‘পবিত্র কোরআনের ব্যাকরণগত ভুল আছে’ (ভলিউম-১, পৃ. ৬২৬)। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের ভয় দেখাতে হলে সব মুসলমানকেই টেররিস্ট হতে হবে। ওসামা বিন লাদেন যদি ইসলামের শত্রুদের বিপক্ষে লড়েন, আমি তার পক্ষে আছি। তিনি যদি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী আমেরিকার বিরুদ্ধে ত্রাস সৃষ্টি করেন, আমি তার পক্ষে আছি।’

এ ছাড়া সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু তার কিছু বিতর্কিত বক্তব্য তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘প্রত্যেক মুসলমানকেই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। যদি সে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করে, তাহলেই সে কেবল ইসলামের অনুসারী।’ ‘মুসলমান সমাজে স্ত্রীকে মারধর করা খারাপ কাজ নয়’ বলেও দাবি তার। জাকির নায়েকের বিতর্কিত বক্তব্যের মধ্যে আরও রয়েছে, ‘মুসলমান দেশে আমরা কীভাবে মন্দির ও চার্চ নির্মাণ করতে দিই, যেখানে তাদের ধর্মটাই ভুল, তাদের ধর্মভাবনাও ভুল।’ তিনি বলেছেন, ‘সমকামীদের হত্যা করা উচিত।’ ডা. জাকির ২০০৪ সালে ‘ইসলামিক ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক অব অস্ট্রেলিয়া’র আমন্ত্রণে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা পোশাক মেয়েদের ধর্ষণের অন্যতম কারণ। এ ধরনের পোশাক মেয়েদের পরপুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।’ নারীদের নিয়ে জাকির নায়েকের আরও অনেক বক্তব্য বিশ্বজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে জাকির নায়েক বলেছেন, ‘মেয়েদের স্কুলে পাঠানো উচিত নয়। স্কুলে গিয়ে মেয়েরা তাদের কুমারীত্ব হারায়। স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং মেয়েদের সোনার গহনা পরতে দেওয়া উচিত নয়।’ ওসামা বিন লাদেনকে ‘ইসলামের সৈনিক’ বলে অভিহিত করায় অনেকেই ডা. জাকির নায়েকের সমালোচনা করে বলেন, তিনি আল-কায়েদাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করছেন। বিন লাদেনকে দোষারোপ না করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে জাকির নায়েক বলেন, বিন লাদেনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। কখনো সাক্ষাৎও হয়নি। যদি বিবিসি, সিএনএন দেখে লাদেন সম্পর্কে বলতে হয়, তাহলে তাকে বলতেই হবে যে লাদেন একজন সন্ত্রাসী। কিন্তু কোরআন বলছে কোনো সংবাদ পেলে তা প্রচারের আগে যাচাই করে নিতে। তাই তিনি তাকে দোষারোপ করতে পারেন না। জাকির নায়েকের মতে, ‘যদি বিন লাদেন ইসলামের শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করেন, তবে আমিও তার সঙ্গে আছি। মুসলমানদের এমন হওয়া উচিত যেন তাদের দেখলে সমাজবিরোধী লোকদের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি হয় এবং এরূপ হলে প্রত্যেক মুসলমানকে একজন সন্ত্রাসী হওয়া দরকার।’ ২০০৭ সালের নভেম্বরে জাকির নায়েক মুম্বাইতে একটি সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি ছাড়াও ২০ জন ইসলামী পণ্ডিত বক্তব্য দেন। সেখানে জাকির নায়েক শিয়া ও সুন্নিদের বিরোধ বিষয়ে কথা বলেন এবং ইয়াজিদের নামের পর রাদিয়াল্লাহ তায়ালা (আল্লাহ তাদের অনুগ্রহ করুন) বলেন। শান্তি সম্মেলনের বক্তব্যে জাকির কারবালার যুদ্ধ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও উল্লেখ করেন।

তার বিতর্কিত বক্তব্যের মধ্যে আরও রয়েছে— সৃষ্টিতত্ত্ব : ডারউইনের বিবর্তনবাদ কেবল একটি তত্ত্বমাত্র, বাস্তবতা নয়; আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টিতত্ত্বে। আমি একজন ডাক্তার, এ বিষয়ে আমি বোকাদের সঙ্গে তর্ক করতে চাই না। নাইন-ইলেভেন : ওই হামলার জন্য আল-কায়েদা দায়ী নয়। এমনকি একজন বোকাও বলবে, ওই ঘটনা তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেরাই ঘটিয়েছে। পোশাক বিষয়ে বলেছেন, শরীর দেখানো যদি আধুনিকতা হয়, তাহলে পশুরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের ১৮ অক্টোবর ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন জাকির আবদুল করিম নায়েক। যিনি এখন জাকির নায়েক নামে পরিচিত। মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষে তিনি কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। পরে মেডিসিনের ওপর পড়াশোনা করতে টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "যত অভিযোগ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*