নিউজ ডেস্ক: হাই কোর্ট বিভাগের এক বিচারকের অপসারণের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে বিচারপতিদের জন্য ৪০ দফা আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
পেশাগত অসদাচরণের কারণে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারক সৈয়দ শাহিদুর রহমানকে অপসারণের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারকদের আচরণবিধি বিষয়ে ৪০ দফা উল্লেখ করা হয়েছে।
হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর করা আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সম্প্রতি ১০৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
যে বিচারককে নিয়ে ৪০ দফা আচরণবিধি আপিল বিভাগের কাছ থেকে এসেছে, সেই সৈয়দ শাহিদুর রহমান ২০০৩ সালের এপ্রিলে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
৪০ দফা আচরণবিধি:
* একজন বিচারকের আচরণ এমন উচ্চ মানের হতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও একাগ্রতা সমুন্নত থাকে।
* রায়ে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কোনো পারিবারিক, সামাজিক বা অন্য ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখা বিচারকের উচিত নয়।
* ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য একজন বিচারক তাঁর পদ ব্যবহার করতে পারেন না।
* অন্য কোনো ব্যক্তি তাঁর সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে একজন বিচারককে প্রভাবিত করবেন, সেটাও ওই বিচারক হতে দিতে পারেন না।
* আদালতে বিচারাধীন মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে বিচারক জনসমক্ষে মন্তব্য করতে পারবেন না।
* রায় বা আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকেরা অহেতুক দেরি করতে পারবেন না। ব্যতিক্রমী মামলা ছাড়া আদালতে রায় ঘোষণার ছয় মাসের মধ্যে বিচারককে পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করতে হবে।
* যদি যৌক্তিক কারণে কোনো মামলায় বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে ওই বিচারক নিজেকে বিচারকাজ থেকে সরিয়ে নেবেন।
* এমন কোনো জনবিতর্ক বা রাজনৈতিক বিষয়ে বিচারকেরা জড়িত হবেন না বা মতামত দেবেন না, যে বিষয় পরে বিচারের জন্য তাঁর সামনে আসতে পারে।
* বিশেষ করে একই আদালতে আইন পেশায় যুক্ত বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে অন্তরঙ্গতা থাকতে পারবে না।
* বিচারকের পরিবারের সদস্য যেমন স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, জামাই-পুত্রবধূ বা যেকোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যদি আইনজীবী হন, তাহলে তাঁর পরিচালিত কোনো মামলা ওই বিচারক বিচার করতে পারবেন না।
* বিচারকের পরিবারের কোনো সদস্য যদি আইনজীবী হন, তাহলে ওই আইনজীবী কোনোভাবে বিচারকের বাসায় পেশাগত কাজ পরিচালনা যেমন ব্যক্তিগত চেম্বার করতে পারবেন না।
* পরিবারের কোনো সদস্য জড়িত—এমন কোনো মামলাও বিচারক শুনতে পারবেন না।
* প্রধান বিচারপতি চাইলে বিচারককে তাঁর সম্পদ ও দায়দেনার বিবরণী জমা দিতে হবে।
* বিচারক গণমাধ্যমে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না।
* বিচারক বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য কারও কাছ থেকে বিচারিক ক্ষমতার বিনিময়ে উপহার, অনুরোধ, ঋণ বা সুবিধা চাইতে পারবেন না।
* বিচারকেরা নিজে বা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌথভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
* বিচারক দেশে বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।
* একজন বিচারক নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নেবেন, যদি তিনি আগে ওই মামলায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করে থাকেন অথবা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে নিজে ওই মামলায় যুক্ত থেকে থাকেন।
* বিচার শুধু করলে হবে না, বিচার করা হয়েছে সেটা দৃশ্যমানও হতে হবে।
* বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যেন অক্ষুণ্ন থাকে—এমন আচরণ করতে হবে।
সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে ২০০০ সালের ৭ মে তখনকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ১৪ দফা আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছিলেন

Be the first to comment on "যে সব আচার মানতে হবে বিচারকদের"