যৌনতার মোহ: এর প্রয়োজন এবং যত ভুল ধারণা

নিউজ ডেস্ক : মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে যৌনতা। এ বিষয়টি এমন যে, মানুষের তা প্রয়োজন হবে এবং এটা চাইতে হবে।

আঠারো শো শতকের অভিযাত্রীরা দক্ষিণ প্যাসিফিক অভিযান শেষে ফিরে এসে যৌনতাকে বর্জন করার অনেক গল্প ছড়িয়ে দেন। কিন্তু তখন পশ্চিম বিশ্ব যৌন বিষয়ে উদ্যম আচরণ সৃষ্টি হচ্ছে। অ্যান্ড মার্টিন এ বিষয়ে নতুন কিছু ভাবতে চাইছেন। তার মতে যৌনতা সম্পর্কে এখনো অনেক ভুল ধারণা ছড়িয়ে রয়েছে মানুষের মাঝে। এ বিষয়টি নিজের ভাষায় তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি।
অ্যান্ড লিখেছেন, যৌনতার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এটা অনেক বড় বড় সমস্যা কারণ। এর ওপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয়। একে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করলে এক সময় পাগলামিতে পরিণত হয়।

বিষয়টি জেনেসা আব্রামসের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশের কোঠায় পা দেওয়া আমার এক বন্ধু। তার প্রথম ভালোবাসার মানুষটির একটি অভ্যাস ছিল। তিনি জেনেসাকে খুব দ্রুতই যৌনকর্মে জড়িয়ে ফেলতে চাইছিলেন। কিন্তু বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন মেয়েটা। বুঝলেন, প্রেমিকের কাছে এ বিষয়টি অস্বাভাবিকভাবে কাম্য, আর তার নিজের এত বেশি প্রয়োজন নেই। আসলে মেয়েটা এমন এক সংস্কৃতিতে বাস করছে যাকে বলা যায় হাইপার-সেক্সুয়ালাইজড।

ব্যক্তিগতভাবে আমি ১৭৬০ সময়কার কথা বলবো। সেই সময় পৃথিবীটা এলোমেলো চিন্তাধারায় ভরপুর। ১৭৬৮ সালে ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রী তাহিতিতে পা রাখলেন। তার ছড়ানো গল্প উত্তর গোলার্ধকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। তিনি জানালেন, দক্ষিণ গোলার্ধ যৌনতার স্বর্গ। ফ্রান্সের নাবিকরা তাহিতির নারীদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। কারণ সেই নারীরা খুব সহজেই নাবিকদের যৌনসঙ্গিনী হতে প্রস্তুত ছিলেন। সমুদ্র মাস ও বছর কাটিয়ে তারা এ কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতও থাকতেন।

এক শতাব্দি পর চিত্রশিল্পী পল গগিন বোগেইনভাইল দ্বীপ থেকে তাহিতিতে পাড়ি জড়ালেন। তিনিও পরম তৃপ্তির খোঁজে বের হলেন এবং পালিয়ে বেড়ালেন। কিন্তু এ যাত্রায় বেশি কিছু দারুণ চিত্রকর্ম সৃষ্টি করলেন তিনি।

তবে এসব সময়ের তুলনায় উনিশ শো শতক নিপীড়নের স্বর্ণযুগ ছিল না। ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের ক্লাসিক আইডিয়া চারদিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তখন পাম গাছের ফ্যান্টাসি এবং হালকা বাতাসের স্বাদ নিতে থাকে মানুষ। বিষয়টি ছিল তৃপ্তি অর্জনের। ইউটোপিয়ান ড্রিমার চার্লস ফোরিয়ার একটা কমিউনিটি গড়ে তোলেন যে সময়টাকে বলা হয় ‘এজ অব হারমনি’। সেখানে মানুষের আনন্দ-উৎসবের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে দৈহিক সম্পর্ক জড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না এবং যৌন সেবা পেতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। আসলে এমন কিছু কমিউনিটি গড়ে ওঠে আমেরিকায়। এদের অনেকে হারিয়েও যায়। আসলে গোটা বিষয়টি কামনা চরিতার্থ করা ও তৃপ্তিলাভ সংক্রান্ত ছিল। তাদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। তখন এ আকাঙ্ক্ষা কেবল অধিকার নয়, এটা যেন দায়িত্ব পরিণত হয়।

ফোরিয়ারই ঠিক ছিলেন। আমরা এখন এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে যৌনতা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযাত্রীদের এসব আবিষ্কারের বিষয়ে দারুণ উৎসাহী ছিলেন ফ্রয়েড। তিনি মানুষের মনোজগতের ওপর নিজ ধারণার ওপর ভিত্তি করে ১৮ শো শতকের বিশ্বচিত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেন। সেখানে দেখা গেছে, উত্তর গোলার্ধের অহংবোধ বুনো এবং ইন্দ্রিয় সর্বস্ব দক্ষিণ গোলার্ধকে খুব কমই বিশ্লেষণ করেছে। ‘দ্য ফাংশন অব দ্য অর্গাজম’ বইয়ের লেখক উইলহেম রাইখ এবং হলিউডের কিংবদন্তি লাভার বয় ওয়ারেন বিটি তৃপ্তির মাত্রাকে সর্বোচ্চে নিয়ে যেতে মানুষকে উদার হওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়টি এক সময় আমাদের অবচেতন মনে জরুরি হয়ে দেখা দেয়। যৌন আকাঙ্ক্ষার প্রয়োজনীয়তা যেন সবর্বব্যাপী হয়ে যায়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঈশ্বরবাদেও এ বিষয়টি বিভিন্নভাবে স্পষ্ট হয়েছে। বলা হয়, প্রেমের দেবতা সত্যিই চান মানুষ প্রেম-যৌনতায় ডুবে যাক। বিয়ে দেয় সঙ্গিনীর সাথে ভালোবাসা-বাসি এবং তৃপ্তিলাভের আদেশ। সম্প্রতি এক স্ত্রীর কথায় বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়। তিনি নিপীড়িত, নাকি নিপীড়িত নন তা স্পষ্ট নয়। তার স্বামী এটাই ভাবেন যে তার স্ত্রী স্বামীর স্বমেহনের উপলক্ষ হতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, স্ত্রী তা পছন্দ করেছেন কি না?

একবার সেন্ট ট্রোপেজে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু গ্রিফোকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে কিছুটা ভিন্ন চিন্তাই করে। আসলে বোগেনভাইলের ২০০ বছরের পরও আমরা এখনো সেই পুরনো তত্ত্বেই আছি। আসলে গার্ডেন অব ইডেন, বয়ঃসন্ধিকালের প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় বোঝার পর থেকেই আমরা এ বিষয়ে উদার হতে শুরু করেছি। আবেগময় শিক্ষা প্রদানের ঘটনা অহরহ ঘটেছে। গল্প দিয়ে অনেক ‘জিরো’কেই ‘হিরো’ বানানো হয়েছে। কিন্তু কেউ-ই পুরোপুরি ‘জিরো’ বা ‘হিরো’ হননি। যৌন জীবনের বিবর্তনের সব ঘটনা আসলে সহায়ক হয়ে ওঠে না। আসলে জেনেটিক কারসাজিও রয়েছে। হতে এমন কিছু স্বার্থপর জিন রয়েছে যা কোনো নারী দিয়ে মৈথুন করিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা তৈরি করে। তালে যৌন সংগ্রামের কি হবে? নাকি এটা আসলে কিছুই নয়? কখন এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে?

আসলে যৌনতা খুবই বিদঘুটে এবং জটিল। এটা দেহের অভ্যন্তর ও বাইরের জটিল এক বিষয়। একে নিয়ে ভুল অনেক কিছুই ভাবা যায়। যৌনতার অনুভূতি বা প্রক্রিয়া আসলে কিভাবে কাজ করে, তাও পুরোপুরি বুঝতে পারাটাও দারুণ কঠিন বিষয়। তবে এ কথা বলা যায়, যৌনতার দুনিয়া বিগত কয়েক শতাব্দি ধরে বিশাল অর্থনৈতিক খাত সৃষ্টি করেছে। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

Print Friendly, PDF & Email
basic-bank

Be the first to comment on "যৌনতার মোহ: এর প্রয়োজন এবং যত ভুল ধারণা"

Leave a comment

Your email address will not be published.


*