নিউজ ডেস্ক ॥ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তৃতীয় ফরেনসিক ল্যাবরেটরি রাজশাহীতে স্থাপন করা হয়েছে । সেখানে মামলা তদন্তে ৯ ধরনের সুবিধা পাবে রাজশাহী ও রংপুর রেঞ্জের ১৬ জেলা পুলিশ ও দুটি মহানগরের সব থানা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তের জন্য কর্মকর্তাদের এখন আর ঢাকায় ছুটতে হবে না। এতে সাশ্রয় হবে সময় ও অর্থ। গতি আসবে উত্তরাঞ্চলের সব ধরনের মামলায়।
জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিআইডির দুটি ফরেনসিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট মামলার তদন্তে এগুলোর সহায়তা নিয়ে থাকে। এবার তৃতীয় ল্যাবটি স্থাপিত হয়েছে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এর উদ্বোধন করবেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, ‘ল্যাবটি ৩৫ জনের মতো জনবল নিয়ে যাত্রা করছে। ধীরে ধীরে ল্যাবের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে। ফৌজদারি মামলার তদন্তে সব ধরনের পরীক্ষাসেবা ল্যাবটিতে বিনামূল্যে প্রদান করা হবে।’
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ডিএনএ; সাইবার ক্রাইম; অস্ত্রের ব্যালিস্টিকস; ভিসেরা; মৃত ব্যক্তির হাড়, চুল, রক্ত, ফিঙ্গারপ্রিন্ট; অ্যাসিড, রাসায়নিকসহ নানা ধরনের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে সিআইডির ল্যাবে।
চট্টগ্রাম ছাড়া সারাদেশের মামলার আলামত ঢাকায় পাঠানোয় অনেক বেশি চাপ তৈরি হয়। এ জন্য বিভিন্ন রিপোর্ট পেতেও কিছু ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। অনেক সময় আবার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আলামত আনতে গিয়েও মান কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এসব সমস্যা মাথায় নিয়েই বিভাগীয় পর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিআইডির ফরেনসিক শাখার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘ল্যাবটির যাত্রা শুরু হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর মামলার তদন্তে গতি আসবে। এটি খরচ এবং সময় দুটিই সাশ্রয় করবে।’
সিআইডি জানায়, ল্যাবের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে সব ধরনের মাদকদ্রব্য; মৃত মানুষ ও পশুপাখির ভিসেরা; কবর থেকে উত্তোলিত হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু; বিষাক্ত বা চেতনাশক পদার্থের উপস্থিতি; রক্ত মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি; অ্যাসিড মিশ্রিত আলামতে অ্যাসিডের উপস্থিতি; বিস্ফোরক দ্রব্য; দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল; জিএসআরসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতমাত দেওয়া হবে।
আর ক্রাইম সিন থেকে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট ল্যাটেস্ট প্রিন্ট এএফআইএস ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গেও তল্লাশি করে মিল বা অমিল সম্পর্কে মতামত মিলবে।
এ ছাড়া বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় বিবদমান দলিলের লেখা বা স্বাক্ষর জাল, নম্বর ঘষামাজা করে বা রাসায়নিক ব্যবহার করে অবমোচন হলে সে বিষয়েও মতামত দেওয়া হবে পরীক্ষার মাধ্যমে।
সিআইডি আরও জানায়, দেশি-বিদেশি সব কারেন্সি নোট ও কয়েন বা ধাতব মুদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেট্রাল কম্পারেটরের মাধ্যমে নোটের দৃশ্য-অদৃশ্যমান বৈশিষ্টগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে মতামত দেওয়া হবে। অপরাধীদের ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ, ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ এবং বিতর্কিত ছবির সঙ্গে নমুনার মিল আছে কিনা- তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মতামত মিলবে ল্যাব থেকে। আগ্নেয়াস্ত্র-সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধের ঘটনায় উদ্ধারকৃত বা অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও ফায়ার্ড বুলেট বা এসবের কোনো অংশবিশেষ পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া হবে।
গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, ট্রেডমার্ক তৈরিকারী দেশের নাম এবং কোনো ধাতব বস্তু মুছে ফেলা বা বিকৃত করা, ক্রমিক নম্বর সংখ্যা বা যে কোনো চিহ্নের বিষয়েও মতামত দেওয়া যাবে পরীক্ষা করে। পায়ের বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভুক্তভোগী শনাক্তে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া হবে। আর অপরাধস্থল পরিদর্শন করে বস্তগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন, সংরক্ষণ করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট থানা বা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেবে ক্রাইম সিন ইউনিট।
Be the first to comment on "রাজশাহীতে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব ॥ গতি পাবে উত্তরাঞ্চলের সব মামলার তদন্ত"